ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৯( বিন্দুবাংলা টিভি .কম রিপোর্ট): মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে রাজপথ দাঁপিয়ে বিপুলসংখ্যক যানবাহন। ওসব সিলিন্ডারের মধ্যে কোনোটিতে ক্রটি তৈরি হয়ে থাকলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। অপরীক্ষিত সিলিন্ডার মূলত একেকটি বোমা। বর্তমানে খোদ রাজধানী ঢাকাতে সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৭টি সিএনজিচালিত যানবাহন। যেগুলোর গ্যাসভর্তি সিলিন্ডারের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও পরীক্ষা করা হয়নি। বিস্ফোরক পরিদফতর এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিবেশ অধিদফতর ১৮৮৪ সালের বিস্ফোরক আইন অনুযায়ী ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারকে বোমা হিসেবে বিবেচনা করে। ওই কারণে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ৫ বছর পর পর সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষণের নীতিমালা রয়েছে। আন্তর্জাতিক রীতিতে ৩ হাজার পিএসআই প্রেশার বা গ্যাসের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা সিলিন্ডারের আছে কিনা সে বিষয়টি পাঁচ বছর পর পর পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশেও ২০০৫ সালে যে সিএনজি বিধিমালা করা হয়, সেখানে ৫ বছর পর পর সিএনজিচালিত যানবাহনের সিলিন্ডার পরীক্ষার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরীক্ষায় ত্রুটি ধরা পড়লে নতুন সিলিন্ডার বসাতে হবে। তবে গাড়ির মালিক ও চালকদের উদাসীনতায় বছরের পর বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার নিয়েই চলছে প্রায় পৌনে ২ লাখ যানবাহন। সূত্র জানায়, গত জুন পর্যন্ত সারা দেশে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৩ হাজার ১৩১টি। তার মধ্যে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫০৬টি যানবাহন সিএনজি ব্যবহারের জন্য রূপান্তরিত। আর ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি অটোরিকশা ও ৪০ হাজার ৩৮৩টি বাহন গ্যাসচালিত হিসেবে আমদানি করা হয়েছে। ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত যেসব বাহন রূপান্তরিত এবং নিবন্ধিত হয়েছে, বিধিমালা অনুযায়ী গত বছর জুনে সেগুলোর সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষার মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৯টি সিএনজিচালিত যানবাহন নিবন্ধিত হয়। তার মধ্যে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৯টি বাহনের সিলিন্ডার গত অক্টোবর পর্যন্ত অপরীক্ষিত ছিল। আর চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সে সংখ্যাটা আরো বেড়েছে। তবে তার মধ্যে কিছু গাড়ির সিলিন্ডার রিটেস্ট বা পুনঃপরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে আরপিজিসিএলের তথ্যানুযায়ী ২০০৫ সালে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয় দুটি, ২০০৬ সালে ৭টি, ২০০৭ সালে ৭টি, ২০০৮ সালে ৮টি, ২০০৯ সালে ৫টি, ২০১০ সালে ৫টি, ২০১১ সালে ৬টি, ২০১২ সালে ৫টি, ২০১৪ সালে ১০টি, ২০১৬ সালে ৪টি এবং ২০১৭ সালে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই টাঙ্গাইলে একটি মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৩ জনের মৃত্যু হয়। একই বছরের ৩ জুন নোয়াখালীতে একটি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একজন মারা যান।
সূত্র আরো জানায়, বৈধ বা অনুমোদিত কনভারশন সেন্টারের মাধ্যমে যেসব গাড়ির সিলিন্ডার রিফুয়েলিং করা হয়, সেগুলো নিরাপদ। সেসব সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে না। সেজন্য বিআরটিএকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার সময় অন্যান্য যন্ত্রাংশের পাশাপাশি গাড়ির সিলিন্ডার বৈধ কনভারশন সেন্টার থেকে রিফুয়েলিং করা হয়েছে কিনা, মেয়াদ শেষে রি-টেস্টিং করা হয়েছে কিনা ওসব বিষয় যাচাই করে পরে সার্টিফিকেট দিতে। ভুয়া সনদ দেখিয়ে যাতে ফিটনেস না নিতে পারে বিআরটিএকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মূলত বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে আরপিজিসিএল গাড়ির সিলিন্ডার রি-টেস্টিংয়ের যে তথ্য পায় তা-ই মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ওই তথ্যানুযায়ী এপ্রিল ২০১৯ শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি কনভারশন গাড়ির সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার। তার মধ্যে ৯২ হাজার ৬৭৬টি গাড়ির সিলিন্ডার রি-টেস্ট করা হয়েছে। বাকিগুলো অপরীক্ষিত অবস্থায় চলছে। ওই তথ্যানুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার নিয়ে চলছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৭টি গাড়ি।
এদিকে যানবাহনে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার প্রসঙ্গে বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও অপরীক্ষিত সিলিন্ডার নিয়ে যেসব গাড়ি চলমান রয়েছে বা যারা চালাচ্ছে, তারা নিজেরাই মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে। ছোট গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে চালক ও ভেতরের যাত্রী হতাহত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বড় গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আশপাশের লোকজনেরও ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়। ওই বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদফতর বিআরটিএকে বার বার বলেছে, যাতে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার আগে সিলিন্ডারের মেয়াদের বিষয়টি যাচাই করা হয়।