November 23, 2024, 10:46 am

দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ছাগলনাইয়া সরকারী হাসপাতাল।

  • ৩ জুলাই ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম,   
 
সৈয়দ কামাল,ফেনী থেকেঃস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকী না থাকায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ছাগলনাইয়া সরকারী হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাক্তার মোঃশিহাব উদ্দিন,ছাগলনাইয়া হাসপাতালটিকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।তিনি হাসপাতালের অফিস কক্ষের জন্য সরকারের দেওয়া এসি খুলে নিয়ে লাগিয়েছেন নিজ বাসায়।
নিয়ম অনুযায়ী অফিস চলাকালীন সময় তিনি প্রাইভেট রোগী দেখতে পারেন না। কিন্তু ডা.শিহাব অফিস সময়ে তার কক্ষের সামনে একটি বহিরাগত যুবককে বসিয়ে রেখে বিজিটের বিনিময় প্রাইভেট রোগি দেখেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।এ ছাড়া তিনি সরকারি বাসা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির দুইজন প্রতিনিধির কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।হাসপাতালের সরকারী বাসা বরাদ্দের বিষয় ও ডা.শিহাবের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।পিয়ন ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর পরিবার দীর্ঘ বছর যাবৎ অদৃশ্য ক্ষমতা বলে থাকছেন পদ শূণ্য থাকা ডাক্তারদের বাসায়।বেসরকারি হাসপাতাল ও বাইরের রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলো থেকে অনৈতিক সুবিধা ও কমিশন নিয়ে সরকারের দেওয়া এক্সরে,আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন চালু করছেন না হাসপাতালের (টিএইচও) ডা.শিহাব এমন অভিযোগও করেছেন রোগীরা।

রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন না হলেও ডা. শিহাব রোগীর প্রয়োজনের বাইরে বেশ কয়েকটি প্যাথলজি পরীক্ষা দেন।তিনি প্যাডে লিখে দেন তার পছন্দের রোগ নির্ণয় কেন্দ্র গুলির নাম।রোগী তার নির্দেশিত রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে না গেলে তিনি পরীক্ষার কাগজ ছুড়ে ফেলে দেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তবোগী একাধীক রোগী।অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মোঃশিহাব উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ছাগলনাইয়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাগজে কলমে থাকা ডাক্তারদের মধ্যে থেকে একজন ডাক্তার তিন দিনের ছুটি নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।এ ছাড়া ২ জন ডাক্তার ডেপুটেশনে ফেনী সদর হাসপাতালে ডিউটি করলেও বেতন-ভাতা তুলছেন ছাগলনাইয়া থেকে।অপর একজন ডাক্তার ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। 

এখন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন ১০ জন ডাক্তার। এদের মধ্যে ও অনেকে নিয়ম মেনে অফিস করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।অনেকে অফিস সময় শেষ হওয়ার পরও কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেন না।অভিযুক্ত ডাক্তাররা থাকেন জেলা শহরে।অভিযোগ উঠেছে ফেনীর বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করতে গিয়ে অফিসে আসতে পারেন না তারা।একই অবস্থা অফিস স্টাফদের বেলায়ও।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জহিরুল হক জানান,প্রধান উপসহকারী পরিবার পরিকল্পনা পদটি খালি,তার স্থলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ডা.তাসলিমা আক্তার। ভুক্তভোগীরা জানান,বেলা ১১টায়ও কর্মস্থলে আসেন না তিনি।বর্তমানে হাসপাতালটটিতে শূন্য রয়েছে চক্ষু, ডেন্টাল,চর্ম ও যৌন,অর্থোপেডিক,ইএনটি,সহকারী সার্জন প্যাথলজি,সহকারী সার্জন এএমসি ও অ্যানেসথেটিস্টের পদ।হাসপাতালের আয়োতাধীন শূন্য রয়েছে শুভপুর,ঘোপাল ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের মেডিকেল অফিসার,মহামায়া, ছাগলনাইয়া,রাধানগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের সহকারী সার্জন/এমও পদ।৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদ ২৫টির মধ্যে খালি রয়েছে ১৫টি।
হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত নার্সদের বিরুদ্ধে ও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ,১৯ জন নার্স থাকার পরও ভর্তিকৃত রোগীরা ঠিকমত সেবা পান না।নার্সরা তাদের নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে আসেনা বলে,আয়া বা ঝাড়ূদাররা রোগীদেরকে স্যালাইন খুলে দেন বা লাগিয়ে দেন।
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করা ছাগলনাইয়া হাসপাতালে কর্মরত আরেক ক্ষমতাধর কর্মচারীর নাম হলো মোহাম্মদ উল্যা।হাসপাতালে তার নিয়োগ টিকা দানকারী পদে হলেও সে দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ হাসপাতাল কক্ষে বসে প্রকাশ্যে বিক্রি করে যাচ্ছে হারবাল কোম্পানির বিভিন্ন ঔষধ।সপ্তাহে দুই দিন হাসপাতালে টিকা নিতে আসা গর্ভবতী মা,শিশু ও উঠতি বয়সী তরুনিদের কাছেই হারবাল কোম্পানির যৌন উত্তেজক এবং মোটাতাজা করণ এইসব ঔষধ বিক্রি করেন মোহাম্মদ উল্যা।সরকারী হাসপাতালের কর্মচারী মোহাম্মদ উল্যা’র নিয়মবহির্ভূত  প্রকাশ্যে হারবাল কোম্পানির ঔষধ বিক্রির বিষয়টি তুলেধরে,স্থানীয় সাংবাদিকরা একাধীকবার পত্র পত্রিকায় লিখলেও তদারকী ও জবাবদিহিতা না থাকায়  অদ্যাবধী হাসপাতাল কক্ষে বসেই প্রকাশ্যে বহালতবিয়তে ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাধর এই মোহাম্মদ উল্যা।
ছাগলনাইয়া হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংবলিত অপারেশন থিয়েটার থাকলেও শুরু থেকে এটির তালা খোলা হয়নি আজ পর্যন্ত।জরুরি বিভাগে কাটাছেঁড়া রোগী এলে চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে তাদের ফেনী বা চট্টগ্রামে রেফার করার অভিযোগ ও রয়েছে পাসপাতালটির ডাক্তারদের বিরুদ্ধে।জরুরি বিভাগের কক্ষটির আয়তনে ছোট হওয়ায় একের অধিক রোগী এলে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।হাসপাতালকে ঘিরে আশেপাশে গড়ে উঠেছে একাধিক ক্লিনিক।
ছাগলনাইয়া সরকারী হাসপাতালের (টিএইচও) ডাক্তার মোঃশিহাব উদ্দিনের এইসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় সরেজমিন তথ্য সংগ্রহে হাসপাতালে অবস্থানকালীন সময়,ডা.শিহাব প্রতিবেদকের কাছে এসে বলেন,কি ভাই হাসপাতাল নিয়ে কিছু লিখবেন নাকি,লিখেন লিখেন আপনার লিখনিতে আমার কিছু যাবে আসবে না।আপনার মত অনেক সাংবাদিক আমার কছে ও আছে, যাদেরকে আমি পুষে রাখি,আপনি বিরুদ্ধে লিখলে ওরা পক্ষে লিখবে,যার কারণে আপনার লিখাটি প্রকাশ হলে ও তার কোন গ্রহণ যোগ্যতা থাকবে না।আপনার লিখাটি প্রকাশ হয় তাহলে আমাকে একটা কপি দিয়েন।এইসব বলে হাসতে হাসতে চলে গেলেন ডা.শিহাব
হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা.নিয়াতুজ্জামানকে অবগত করলে,তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ডা.শিহাবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গুলি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে এক্সরে,আলট্টাসহ রোগ নির্ণয়ের মেশিনগুলো সচল করার কথা ও জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা