ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৯ (স্টাফ রিপোর্টার) : ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ভারতীয় শাখা ইন্ডিয়ান ইকোনমিক ফোরাম ২০১৯-এ যোগ দিতে চার দিনের সফরে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফোরামে নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হওয়াসহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির চিত্র সেখানে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সফরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও কয়েকটি চুক্তি সম্পাদনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) কমর্সূচিতেও অংশগ্রহণ করবেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-২০৩০ ভিভিআইপি ফ্লাইটে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, শিক্ষা ও ভূমিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা রয়েছেন।
স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবাহিনী স্টেশনে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরকালীন আবাসস্থল তাজমহল হোটেলে যাবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিগত কয়েক বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার সরকারের ব্যাপক সাফল্যের কথাও উল্লেখ করবেন।
এদিন দুপুরে তাজমহল হোটেলের দরবার হলে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটথ শীর্ষক ‘কান্ট্রি স্ট্যাটিজি ডাগালগ অন বাংলাদেশথ-এ অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসে তার সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাতে বাংলাদেশ ভবনে নৈশভোজে যোগ দেবেন তিনি।
সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালে সেখানকার শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এর পর বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক ফোরামের (আইবিবিএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। দুপুরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউএএফ) আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটথ-এর সমাপনী পর্বে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় ইস্যু সামনে আসবে মূলত সফরের তৃতীয় দিন শনিবার। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। এর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আলোচনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা।
সেখান থেকে দুই প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী হায়দরাবাদ হাউসে মধ্যাহ্নভোজ করবেন। বিকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘টেগর পিস অ্যাওয়ার্ডথ দেওয়া হবে। সে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
সফরের শেষ দিন রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ করছেন ভারতীয় এ নির্মাতা।
এর পর দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। এদিন রাতে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে তিস্তার পানিবণ্টন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুর কারণে। হত্যা, ধ্বংস ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে কয়েক দফায় অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
মানবিক কারণে অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বাংলাদেশের পক্ষে বছরের পর বছর তাদের ‘দেখভালথ করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা- বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা বলার অপেক্ষা রাখে না, কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলসহ বিভিন্ন ইস্যু বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে।
উন্নয়ন ও অগ্রগতি, আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন মনোভাব পোষণ করে। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবেও বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যকার স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে। ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট প্রশ্নে ভারতের প্রত্যাশা পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ধারাবাহিকতায় বহুল প্রত্যাশিত পানিবণ্টন সমস্যারও নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশের জন্য তিস্তাসহ ৫৪ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্যহিস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাণিজ্য বাধা অপসারণ গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু নিয়ে জল কম গড়ায়নি; তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর মোদি সরকার আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী
এ ক্ষেত্রে তিস্তা প্রশ্নে মমতা ব্যানার্জি নমনীয় না হলে তাকে বাদ দিয়েই চুক্তি সই করতে পারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ বিদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করার ক্ষমতা কেন্দ্রের রয়েছে। বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুসহ অমীমাংসিত সব সমস্যার নিষ্পত্তিতে আমরা ‘মোদি ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় আছি।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।