১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :
আজ ১৪ ডিসেম্বর। শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আমাদের জাতীয় জীবনে এক বেদনাঘন দিন। একাত্তরের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর দেশ যখন স্বাধীনতার ঊষালগ্নে, ঠিক তখনই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর নরঘাতক হায়েনার দল রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মেতে ওঠে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনযজ্ঞে। বাঙালি জাতিকে মেধা-মননশূন্য করতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুদিন আগে এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। জাতি হারায় অসংখ্য মেধাবী সন্তানকে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দালালরা এ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন পেশার কৃতী সন্তানদের অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। পরবর্তীতে মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটভাটায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাদের বুলেটবিদ্ধ নিথর দেহ। অনেকের হাত পেছনে বাঁধা, শরীরজুড়ে ক্ষতচিহ্ন। হত্যার আগে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল তাদের ওপরে। এসব মৃতদেহ পাওয়ায় উন্মোচিত হয় ঘাতকদের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা। এ ঘটনায় বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত হয়ে যায়। আর কষ্টের দরিয়ায় ভেসে যায় গোটা জাতি।
একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে, সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ জন শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী। এদের মধ্যে রয়েছেন ড. জিসি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজউদ্দিন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমদ, খন্দকার আবু তালেব, আ.ন.ম. গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, আরপি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহী, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, সায়ীদুল হাসান, হাবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও শোকের আবহে আজ পালিত হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে নিয়েছে নানা কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আজ ভোর থেকেই শোকাহত মানুষের ঢল নামে সেদিনের হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রায়ের বাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে। সেখানে অর্পণ করা হয় পুষ্পার্ঘ্য। শোকে আপ্লুত মানুষ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। বেদিমূল ঘিরে থাকেন বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যরা। ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীদের চাপাকান্না আর অশ্রুজলে ভিজে উঠে স্বজনের আনা ভালোবাসার অর্ঘ্য। দেশের সর্বত্র আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। ওড়ানো হয়েছে শোকের প্রতীক কালো পতাকা।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।