৪ অক্টোবর ২০২৩ ইং, বিন্দুবাংলা টিভি ডটকম,
বিপ্লব সিকদার :
জীবন মানেই যুদ্ধ চিরাচরিত কথা। ধরার আলো দেখা থেকে শেষ অব্দি পর্যন্ত প্রতিটি সৃষ্টির নানাহ প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করতে হয়। বিধির বিধান, সামাজিক বিধান, রাষ্ট্রের বিধান কত কি নিয়ম মেনে জীবনে শান্তির আশার আলো দেখার জন্য কতইনা যুদ্ধ করতে হয়। বিচিত্র পৃথিবী বিচিত্র মানুষ, বিচিত্র জীবন। আনন্দ, বেদনা, আলো আধার, সাদা, নীল,কালো বাহারি রঙের ছোঁয়া,মায়ার মোহ, সংসার, আবার ঘর ছাড়া বৈরাগী, নানাহ অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলছে জীবন। সুন্দর পরিপাটি সমাজ ও মানবিকতা চর্চায় সবাই বলি একটু শুখের আশায় মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। সম্প্রতি লামিয়াদের পরিবারের কথা শুনতে গিয়েছিলাম কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বড়কান্দা চৌরাস্তায়। যদিও অন্য কাজে গিয়ে জিড়িয়ে নিতে বাদ মাগরিব চৌরাস্তায় দাড়াই আকস্মিক চোখ যায় চৌরাস্তার উত্তর – পশ্চিম কোনার দোকানে। জরাজীর্ণ দোকান ঘরে এবং বাহিরে বাহারি রকমের মালামালের পশরা সাজিয়েছে ব্যস্ত এক “মা “” আমেনা বেগম। বাহারি ফল, সিদ্দ ডিম, কিছু মুদি – মনিহারি মালামাল ভিতরে একটি পিরিতে বসে ৭ বছরের লামিয়া লেখা পড়া করছে পাশাপাশি মাকে সহযোগিতা করছে এবং ছোট বোনটির সাথে খুনসুটি করছে। আমেনা বেগমের ব্যস্ততার মাঝেও কোন ক্লান্তির ছাপ নেই। বিস্ময়কর দৃশ্য টি ইনিয়ে বিনিয়ে চেষ্টা করলাম লামিয়াদের পরিবারের অদম্য গল্প শুনতে। মুখ খুলতে চায়নি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর। অনেক চেষ্টার পর আমেনা বেগম মুখ খুললেন একদিকে কাস্টমার অন্যদিকে প্রতিবেদকের সঙ্গে গল্প সমান তালেই চলছে। প্রথমে পরিচয় পর্বে বললেন বড়কান্দা গ্রামের মৃধা বাড়িতেই বাড়ি। পরিবারে ৫ সদস্য ১ ছেলে ২ মেয়ে আর স্বামী মোঃ আলাউদ্দিন নিয়ে তাদের সংসার স্বামীর ভয় এবং আত্মসম্মান নষ্ট হয় কিনা এমন ভয়ে বার বার আকুতি করেছিলেন আমেনা। অনেক অভয় দেওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবে কিছু কথা বললেন। একটা সময় স্বামী দোকানটা চালিয়ে সংসার চালাতেন করোনাকালীন পুজি ভেঙে এবং আমেনা বেগমের ছোট বোনকে বিয়ে দিতে গিয়ে আলাউদ্দিন মৃধার সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যায় এবং কিস্তি ও কড়া সুদে প্রায় ৩ লাখ টাকা দেনা। ছেলেটা পাশের সোনাকান্দা মাদ্রাসায় পড়ে মেয়ে লামিয়া বড়কান্দা গ্রামেই মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেনীতে পড়ে। ছোট বাচ্চার খরচ। সব মিলিয়ে সংসারে নেমে আসে দৈন্যদশা। অদম্য আমেনা হার না মানা এক নারী দোকান চালান আর স্বামী অটোরিকশা চালান দুই জনের আয়ে কিস্তি আর সুদ টানতে টানতে কোনরকম সংসার খরচ জোগায়। চোখে টলমল ঝল ঝড়ছে আর বলছিলেন জীবন যুদ্ধের কথা। সরকারি কোন ভাতা বা সহায়তা পান কিনা জানতে চাইলে মাথা নাড়িয়ে না বলেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন পরিশ্রম করে চলছি, কিন্তু নদীতে জোয়ার আসেনা কারন কিস্তি আর সুদ টানতে টানতে কূলায় না। দোকানে মাল কিনতে পারিনা, অনেকেই টাকা পাবে কেউ কেউ অনেক কষ্ট দিয়ে কথ্যা বলে আবার অনেক পাওনাদার সহানুভূতি দেখায়। আমেনা বেগম মলিন বধনে বলে দেনা গুলো পরিশোধ করতে পারতাম। পরিশ্রম করে বাকী জীবন টা সন্তানাদি নিয়ে কাটিয়ে দিতাম! অনেক সহায়তা দরকার কিন্তু ইজ্জতের ভয়ে মুখ ফুটে বলেনা অদম্য আমেনা বেগমের পরিবার! স্বল্প আলোতে রাতে জরাজীর্ণ দোকানে লামিয়ার লেখা পড়া দেখে বুঝা যাচ্ছিল তার পড়ার অনেক ইচ্ছা, একদিকে মাকে সহায়তা করা অন্যদিকে ছোট বোনের সাথে খুনসুটি করছে । মা বিকিকিনিতে ব্যস্ত। পরিবারের প্রতিটি সদস্যই যেন এক অদম্য জীবন যুদ্ধের অগ্রণী সৈনিক। বিত্তবানরা পাশে দাড়ালে হয়তো আমেনারা এ যুদ্ধে জয়ী হবে। দোষে গুণে যেমন মানুষ তেমনি মানুষ মানুষের জন্য। জয় হোক লামিয়া ও আমেনা বেগমরা জীবন যুদ্ধে।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।