বিপ্লব সিকদার।।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই স্বজনদের আনন্দঘন সম্মিলন। যার যার কর্মস্থল ত্যাগ করে নাড়ির টানে আপনজনদের কাছে ছুটে যাওয়া। ছোট, বড় পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য সাধ্যমতো নতুন জামা কাপড় কিনে নিয়ে যাওয়া। ঈদুল ফিতরের আমেজ। বিশেষ করে পিতা – মাতা ভাই বোনদের নিয়ে নতুন কাপড় পড়ে একে অপরের প্রতি আনন্দ ভাগাভাগি করা।বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, ঘুরতে যাওয়া, দীর্ঘদিনের জমে থাকা না বলা কথা বলা। স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা, পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে কোশল বিনিময় করা শহর ছেড়ে গ্রামের মেঠোপথ ধরে দল বেধে হাটা আরও কতকি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরেই নতুন জামা, পরে ঈদগাঁ মাঠে জামাতে নামাজ আদায় করা। সেমাই সিন্নি সহ প্রতিটি ঘরে যার যার সাধ্যমতো ভালো খাবার রান্না করে এক সাথে বসে খাওয়া।মায়ের হাতের রান্না, আহ কত আনন্দ। আবার কারো কারো ভাগ্যে বিষাদের কারন হয়ে উঠে। যারা পরিবারের দায়িত্ব পালন করে তাদের মাথায় চিন্তার ভাজ পরে যায় কিভাবে ঈদের আনন্দ করতে সকলের চাহিদা মেটাতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা। এ যেন এক পূর্ব পুরুষদের অসাধারণ সংস্কৃতির মেলাভার। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ভবিষ্যতেও থাকবে। শুধু অবস্থা বেধে রীতি পরিবর্তন চাহিদা পূরণ এর পরিবর্তন হচ্ছে এবং হবে।আমার জীবনেও এর কোন ব্যতিক্রম নেই। শহর থেকে গ্রামে গেলে মা যখন দেখত বাবা -মা সহ ছোট ভাই বোনদের জন্য সাধ্যমতো কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি গিয়েছি মা বলতেন ইতান কিরতি আনছত আমার আছেনা ঘরে! হাসিমাখা মুখে বাবা ভাইবোনকে হাতে তুলে দিয়ে বলতেন দেক তোর ভাই কত কিছু আনছে। আরও স্বজনরা বাবা মায়ের জন্য কেনাকাটা করে পাঠাতেন। শুধু সন্তানের নেওয়া কাপর গুলো বাবা মা আগে পরিধান করে পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করতাম। এখন বড় থেকে বুড়ু হয়েছি নিজে বাবা হয়েছি কিন্তু নেই বাবা-মা! কেউ আর এখন বলেনা ইতান কিরতি আনছত, হাসিমাখা মায়ের বধন বাবার শাসন অনুশাসন কিছুই নেই, এতটাই ব্যথিত করে যা মুখ ফুটে বলার মানুষ পাওয়া যায়না। একাকি চোখজুড়ে লবনাক্ত পানি বধন বেয়ে ঝরে! সন্তানরা তাদের চাহিদার ফর্দ তুলে দেয় তা মেটাতেই মেরুদণ্ড বাকা হয়ে যায় অনেক পিতা -মাতার! বিশেষ করে আমাদের মত মধ্যেবিত্তদের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিটা মলিন হাসি আর দুনিয়া ত্যাগ করা বাবা মায়ের সেই স্মৃতি কথা স্বরণ করে বুকে চাপা কষ্ট গুলো অনেক পিড়া দেয়। তারাই অনুভব করতে পারে যারা আমার মত মধ্যে বয়সে বা অল্প বয়সে পিতা -মাতা সহ ভাই হারা মানুষ গুলো! কিছু করার নেই, আরতো ফিরে আসবেনা, যিনি পাঠিয়েছেন তিনি নিয়ে গেছেন।” ইতান কিরতি আনছত “! এমন কিছু বাক্য যতনা আনন্দের অনুভূতি ছিল এখন অধিকতর কষ্টদায়ক যা অসহনীয়। শুনবেনা আমার মত পাগল সন্তানের আর্তনাদ! তোমরা ওপারে ভালো থেকো স্রষ্টার কাছে ফরিয়াদ। ভালো থাকুক সকল পিতা মাতা দুনিয়ায় থাকা ও ছেড়ে যাওয়া –।
লেখক – অধম সন্তান।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।