ডেস্ক রিপোর্ট।।
ফের ভোট গণনার পর কুমিল্লা মেঘনা উপজেলা ৭নং লুটেরচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন পরাজিত প্রার্থী মোজাম্মেল হক (আনারস প্রতীক)। দীর্ঘ ২ বছর ৬ মাস পর শপথ নিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হককে। সূত্র : সময় নিউজ
২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ৭নং লুটেরচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার গণনা অনুযায়ী মো. সানাউল্লাহ সিকদারকে (নৌকা প্রতীক) বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সানাউল্লাহ সিকদার (নৌকা প্রতীক) ৩২৫৪ ভোট পেয়েছেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাম্মেল হক হাউদ পেয়েছেন ৩২১৮ ভোট। এখানে ৩৬ ভোটের পার্থক্য দেখিয়ে সানাউল্লাহ সিকদারকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।অনিয়ম ও ভোট গণনা কারচুপি উপলব্ধি হওয়ার পর নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসার আনিছউজ্জামানের (উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের অফিসার) কাছে ভোটের ফলাফলে কারচুপি ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে মৌখিক ও লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়। ভোট গণনার জন্য আবেদন করেন পরাজিত প্রার্থী মোজাম্মেল হক (আনারস প্রতীক)।আবেদনের পরেও তারা কোনো প্রকার প্রতিকার না করায় হাইকোর্টের কাছে উল্লেখিত কারচুপি ও অনিয়মের প্রমাণসহ অবৈধভাবে ঘোষণাকৃত বিজয়ী চেয়ারম্যানের ফলাফলের গেজেট স্থগিতের জন্য রিট দাখিল করলে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করে গেজেট স্থগিতের আদেশ দেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ গেজেট প্রকাশের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের পৌঁছানোর আগেই ২৪ নভেম্বর গেজেট প্রকাশিত হয়।পরবর্তীতে এর প্রতিকার চেয়ে পুনরায় হাইকোর্টের বিচারপতির কাছে আবেদন করলে বিচারপতি প্রকাশিত গেজেটের ওপর শপথ গ্রহণ বন্ধের আদেশ দেন। প্রায় ২ মাসের মতো নির্বাচিত চেয়ারম্যানের শপথ গ্রহণ স্থগিত থাকে। পরবর্তীতে মো. সানাউল্লাহ সিকদার (নৌকা প্রতিক) আপিলের মাধ্যমে শপথ গ্রহণের অনুমতি পান।কিন্তু রায় অস্বীকার করে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে নির্বাচনের ১নং, ২নং, ৬নং, ৭নং ও ৮নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র সমূহের ভোট ফের গণনা করে অবৈধভাবে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের পদ বাতিল করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ জমা দিয়ে পরাজিত প্রার্থী মোজাম্মেল হক (আনারস প্রতীক) ভোট গণনা চেয়ে মামলা করেন।দীর্ঘ প্রায় ১ বছর ৬ মাস পর (১৩ আগস্ট ২০২৩) বিচারকের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের আইনজীবী সামনে রেখে ভোট গণনা করা হয়। উভয়পক্ষের আইনজীবীর মতামতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভোট গণনায় দেখা যায়, সেই পরাজিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাম্মেল হক হাউদ ২৮ ভোট বেশি পেয়েছেন। পরে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সার, সহকারী জেলা জজ, সদর আদালত কুমিল্লা ১৬ আগস্ট ২০২৩ তারিখে বিচারক আবেদনকারী প্রার্থী মোজাম্মেল হক হাউদ (আনারস প্রতিক) বিজয়ী ঘোষণা করেন।পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে সানাউল্লাহ সিকদার (নৌকা প্রতীক) নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। তবে এ আবেদন না মঞ্জুর করে উক্ত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে আদেশ দেন।এমতাবস্থায় বিগত ২০২৪ সালে ২০ই এপ্রিল আদেশ মোতাবেক ৭নং লুটের চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান পদের গেজেট প্রদান কার্যক্রমে আর বাধা না থাকার আদেশ দেন নির্বাচন কমিশন।আদেশ অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার লুটেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মো. সানাউল্লাহ শিকদারের নামে ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখে প্রকাশিত গেজেট বাতিল ঘোষণা করে দরখাস্তকারী মোজাম্মেল হককে নির্বাচিত ঘোষণা করায় তার দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র অনুসারে নির্বাচন কমিশন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী মোজাম্মেল হককে বিজয়ী ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন।নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক হাউদ (আনারস প্রতীক) জানান, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আর প্রায় ২ বছর ৬ মাসের ওপর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে তার জানমাল ও অর্থের ক্ষতি সাধন করেছে তাদের শাস্তি দাবি করেন। সম্পাদনা : বিপ্লব সিকদার