November 21, 2024, 10:17 am

টাঙ্গাইল পৌর মেয়রসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বিপ্লব সিকদার।।
​​​​​​​
লৌহজং নদীতে ব্রিজ নির্মাণে দুর্নীতিতে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার(২ জুলাই) দুদক জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইলের সহকারী পরিচালক বিপ্লব হোসেন এ মামলাটি করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা, উপ পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

মামলার আসামিরা হলেন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক, ব্রিকস অ্যান্ড ব্রিজেজ লিমিটেড এবং দি নির্মাতা (জেভি) প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা মোহাম্মদ মাসুদ, টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) কে এম রশিদ আহম্মদ, টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী (সাময়িক বরখাস্ত) শিব্বির আহম্মেদ আজমী, সহকারী প্রকৌশলী (সাময়িক বরখাস্ত) রাজীব কুমার গুহ এবং উপসহকারী প্রকৌশলী (সাময়িক বরখাস্ত) এ কে এম জিন্নাতুল হক।

মামলার এজাহারে বলা হয়, অসৎ উদ্দেশ্যে পারস্পরিক যোগসাজশে অন্যায়ভাবে আর্থিক লাভের কুমতলবে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের ৭৩ লাখ ২৮ হাজার ৯৫৩ টাকা আত্মসাৎ করে দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এর আগে গত ৯ জুন মেয়র সিরাজুল হকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (কমিশন)।

টাঙ্গাইলের বেড়াডোমা-ওমরপুর সড়কে লৌহজং নদীর ওপর আট মিটার প্রস্থ ও ৩০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে।

২০২২ সালের ১১ মে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তখন পর্যন্ত মাত্র ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। ওই বছরের ১৬ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেতুটির ওপরের অংশে ঢালাই করার পর মাঝখানের সাটারিং সরে গিয়ে সাড়ে তিন ফুট দেবে যায়। তখন সেতুটি নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর হয়। এরপরই আলোচিত এ ব্রিজকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধান করে দুদক।

ওই ঘটনার পর দুদকের টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমানের নেতৃত্বে এনফোর্সমেণ্ট টিম গঠন করা হয়। তারা পরিদর্শন করে স্পেসিফিকেশন বহির্ভূতভাবে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা, গার্ডার ও স্ল্যাবের সেন্টারিং কাজে স্টিলের পাইপের পরিবর্তে গজারি, ইউক্যালিপটাস ও বাঁশের পাইল ব্যবহার, ঠিকাদারের দায়িত্বে অবহেলা ও সাইটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীর অনুপস্থিতিসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার প্রমাণ পায়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন সেতুটির ঢালাই কাজের পূর্বে সেন্টারিং ও শাটারিং করার সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ড্রয়িং ও নকশা অনুসরণ না করে বল্লি ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রকৌশলীরা শুধু চিঠির মাধ্যমে তাদের নিষেধ করলেও ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করতে কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং তারা ঢালাইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে পৌরসভার প্রকৌশলীদের সঙ্গে ঠিকাদারপক্ষের স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং সেতু নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি মেয়র সিরাজুল ইসলাম। বরং কাজের অগ্রগতির তুলনায় অতিরিক্ত বিল দেন।

এদিকে তখন দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তিন প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখা।

দুদকের মামলা অনুমোদনপত্রে বলা হয়, দায়িত্ব অবহেলা ও অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক, ব্রিকস এন্ড ব্রীজেজ লিমিটেড এবং দি নির্মাতা (জেভি) প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা মোহাম্মদ মাসুদ, টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) কে এম রশিদ আহম্মদ, টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী (সাময়িক বরখাস্ত) শিব্বির আহম্মেদ আজমী, সহকারী প্রকৌশলী (সাময়িক বরখাস্ত) রাজীব কুমার গুহ এবং উপসহকারী প্রকৌশলী (সাময়িক বরখাস্ত) এ কে এম জিন্নাতুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে একটি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ,স্থানীয় সূত্রে জানা যায়  দুদকের মামলার অনুমোদনের বিষয়ে জানতে পেরে মেয়র অষ্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা