October 23, 2024, 11:28 am
সর্বশেষ:
দুদকের মামলায় বাবরের ৮ বছরের সাজা বাতিল বঙ্গভবনে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই, জনগণের মেসেজটি আমরা পেয়েছি শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নতুন করে দেশে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছে: নজরুল ইসলাম ঢাবিতে কালো মুখোশে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা চাঁদাবাজির ৪ মামলা হাইকোর্টে বাতিল Q ডিমলায় তিস্তার চরে নিচু জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, বসবাসে ভোগান্তি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যমুনার পাড়ে ইলিশের জমজমাট হাট রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চলছে আলোচনা

রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চলছে আলোচনা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ অথবা পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। কোন প্রক্রিয়ায় তাঁকে অপসারণ করা হবে তা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। সরকারের সূত্র বলছে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নিজে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেই ভালো হয়। আবার সরকারের পক্ষ থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়াও হতে পারে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করলে, সম্ভাব্য পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েও ভাবছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতামতও নিচ্ছে সরকার। আগামী দু–একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সূত্র : দৈনিক আজকের পত্রিকা

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেও তার কোনো দালিলিক প্রমাণ তাঁর কাছে নেই। এরপর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা মিথ্যাচার এবং ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।’

রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে মত দিয়েছেন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেকেই। তাঁরাও রাষ্ট্রপতির তাঁর পদে থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

গত সোমবার রাষ্ট্রপতির সেই সাক্ষাৎকার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরপরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। গতকাল রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে আলটিমেটাম দেওয়া হয়। একই দাবিতে শাহবাগ ও বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করে ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন।

গতকাল দুপুর থেকে আলাদা কয়েকটি ব্যানারে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেয় কয়েক শ বিক্ষোভকারী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের একটি অংশ বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাত পৌনে ২টার দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম গিয়ে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও নতুন রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের জন্য দুই দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবন এলাকা ছেড়ে যায়।

সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ নিয়েও উপদেষ্টা পরিষদে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে কখনোই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যে দ্বিধাও রয়েছে।

তবে এখন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির বিদায়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে মনে করেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একজন দায়িত্বশীল। ওই সূত্র জানান, রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। না হলে সরকারের পক্ষ থেকে আজ–কালের মধ্যে অবস্থান জানানো হবে।

সরকারে একটি সূত্র বলছে, এখন সরকারের ভেতরে মূল আলোচনা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গতকাল দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যেতে পারে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে অভিশংসনের ব্যবস্থা নেই। আবার রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগও করতে পারেন। কিন্তু স্পিকার পদত্যাগ করায় সেই সুযোগও এখন নেই।

আইনজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সবকিছু সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধান না মেনে জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে বর্তমান সরকার রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিয়ে নতুন করে নিয়োগ দিতে পারে। অথবা রাষ্ট্রপতি চাইলে নিজেও পদত্যাগ করতে পারেন। কেননা এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।

এ বিষয়ে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার গণ–অভ্যুত্থানের ফসল। সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে আদেশ দিয়ে বৈধতা দিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচমেন্ট (অভিশংসন) করার জন্য তো সংসদ নেই। এখন হয় রাষ্ট্রপতি নিজে পদত্যাগপত্র দেবেন অথবা বর্তমান সরকার তাঁকে আদেশ দিয়ে সরিয়ে দেবে। বর্তমান সরকারই আবার রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবে। এতে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আগের সরকার যখন পালিয়ে গেল, যারা সফল হলো (বা সরকার গঠন করল) তারা নিজেদের বৈধতা নিজেই সৃষ্টি করেছে। তাই সরকার নতুন রাষ্ট্রপতিও নিয়োগ দিতে পারবে। তবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে এসব কাজের বৈধতা দিতে হবে।’

বাংলাদেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন বা দায়িত্ব নেওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহতের পর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তবে সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে খন্দকার মোশতাক আহমদ ৫ নভেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ওই দিনই সামরিক কর্মকর্তাদের অনুরোধে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন বিচারপতি সায়েম। এ ছাড়া গণ–আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা