ডেস্ক রিপোর্ট।।
রাফি পাঁচ বছরের শিশু। সে খুব হাইপার, মাঝেমধ্যে হঠাৎ দুই কানে হাত দিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে। কারো সঙ্গে তেমন মিশে না, এমনকি কথাও বলে না। যখন অন্য শিশুরা খেলাধুলা আর গল্পগুজবে ব্যস্ত, তখন রাফি চুপচাপ নিজের খেলনা নিয়ে খেলতে থাকে। তার মা-বাবা প্রথমে ভেবেছিলেন ছেলেটা হয়তো লাজুক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তারা বুঝতে পারে, রাফির কথা বলার সমস্যা রয়েছে। রাফির বাবা রাফিকে নিয়ে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পেলেন, রাফির অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে (ASD) আছে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) একটি স্নায়ুবিক বিকাশজনিত রোগের নাম, যা সামাজিক যোগাযোগ, ভাষা এবং আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। অটিজ আক্রান্ত ব্যক্তির অনেকেরই যোগাযোগ ও ভাষা ব্যবহারে সমস্যা থাকে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবন ও সামাজিক সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে। ডাক্তার পরামর্শ দিলেন তার এ সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হওয়ার জন্য।বাংলাদেশে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের কিছু পরিসংখ্যান জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে প্রতি ৫৮৯ শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ (২০২০-২১) অনুযায়ী, বাংলাদেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬১ হাজার এবং অন্য একটি সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখেরও বেশি। এর পরিধি দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই অটিজম সম্পর্কে আমাদের আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সবাইকে অটিজম সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
অটিজম আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সম্পর্কে বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউটের (বিএইচপিআই) স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী অটিজমে আক্রান্ত রয়েছে। কিন্তু তাদের চিকিৎসার জন্য শহরকেন্দ্রিক খুবই অল্পকিছু থেরাপি সেন্টার আছে। বিভিন্ন উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় এর চিকিৎসাসেবা নেই। সরকার এবং এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এগিয়ে আসে, তাহলে উপজেলার সরকারি এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলোয় দক্ষ স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসক এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে এই সেবাটি চালু করা যেতে পারে। অটিজম জনগোষ্ঠী যেন সমাজে বোঝা না হয়ে থাকে, সে জন্য কাজ করা প্রয়োজন। সঠিক সময়ে যদি অটিজম আক্রান্তরা সঠিক চিকিৎসাসেবা পায়, তাহলে অনায়াসে তারা দেশের জন্য সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
লেখক : ইন্টার্ন, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ
থেরাপিস্ট, সিআরপি, সাভার
সূত্র : দৈনিক আজকের পত্রিকা