June 26, 2025, 8:18 pm
সর্বশেষ:
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারেক রহমান: এক আলোকচ্ছটা ডেঙ্গু প্রতিরোধে দরকার গবেষণাভিত্তিক ও সমন্বিত উদ্যোগ শুধু শহর নয়, সংবাদপত্রে গ্রামও প্রয়োজন সমানভাবে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিকের সাথে দুর্ব্যবহার প্রকল্প কর্মকর্তার! রাজনীতিতে অতি উৎসাহী কর্মীদের কবলে অপার সম্ভাবনার নেতৃত্ব: একটি গভীর বিশ্লেষণ ডেমরায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির নেপথ্যে রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও গ্যাং সংস্কৃতি মেঘনার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে সামাজিক বিপর্যয় ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি মেঘনায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে অনিয়ম রোধে প্রশাসনের ভূমিকা জোরালো করতে হবে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি মেঘনা উপজেলায় মাদকের আগ্রাসন: ধ্বংসের পথে যুবসমাজ

ডেঙ্গু প্রতিরোধে দরকার গবেষণাভিত্তিক ও সমন্বিত উদ্যোগ

 

বিপ্লব সিকদার :

বাংলাদেশে আবারও চরম আকারে ফিরে এসেছে ডেঙ্গু জ্বর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ১৫ হাজার, মৃত্যু ছাড়িয়েছে শতাধিক। রাজধানী ঢাকাকে ছাড়িয়ে ডেঙ্গু এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ৬০টিরও বেশি জেলায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আর মৌসুমি ব্যাধি নয়—এটি পরিণত হয়েছে একটি বার্ষিক জাতীয় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, গ্রামেও বিপদ:

গত তিন বছর ধরে শুধুমাত্র ঢাকায় নয়, বরং বিভাগীয় শহর, জেলা এবং গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইইডিসিআর-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, ২০২৪ সালে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশই শহরের বাইরের বাসিন্দা। কুমিল্লা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, কক্সবাজার, রাজশাহী ও কুষ্টিয়ায় নতুন করে হটস্পট গড়ে উঠছে।

 

অকার্যকর ফগিং ও এডিস মশার অভিযোজন:

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (IEDCR)-এর গবেষণা অনুযায়ী, ফগিংয়ে ব্যবহৃত পারমেথ্রিন জাতীয় ওষুধে এখন অনেক মশাই সাড়া দিচ্ছে না। এডিস মশা তার জিনগত গঠন পরিবর্তন করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এডিস মশার ডিম শুকনা জায়গায় ৬ মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, যা ভবিষ্যতে লার্ভায় রূপ নেয়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষ্যভিত্তিক লার্ভা ধ্বংস না করে শুধু কুয়াশা ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রস্তুতির অভাব:

ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসায় দেশের অধিকাংশ উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে রয়েছে সীমাবদ্ধতা। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় NS1, CBC, হেমাটোক্রিট পরীক্ষার সুযোগ অনেক স্থানে নেই। নেই পর্যাপ্ত বেড ও প্লাটিলেট সরবরাহ ব্যবস্থাও।

ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, “রোগীর চাপে প্রায় প্রতিদিনই বেডের সংকট হয়। অনেকে সময়মতো পরীক্ষা না করতে পারায় জটিল পর্যায়ে চলে যায়।”

জলাবদ্ধতা ও অপরিকল্পিত নগরায়ন:

ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরে জলাবদ্ধতা ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এডিস মশার বংশবিস্তারকে উৎসাহ দিচ্ছে। ছাদে জমে থাকা পানি, প্লাস্টিকের কন্টেইনার, ড্রেন ও নির্মাণাধীন ভবনে তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার প্রজনন কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানুষের ঘরের আঙিনাই হতে হবে যুদ্ধক্ষেত্র।”

পরিত্রাণের পথ কী?

বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা নিম্নোক্ত কয়েকটি পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন:

1. সরাসরি লার্ভা ধ্বংসে উৎসভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ
বাড়ি-বাড়ি গিয়ে লার্ভা খোঁজা, নালা ও জমে থাকা পানি পরিষ্কার।

2. মশার জিনতাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণে গবেষণা
জেনেটিকালি মডিফায়েড মশা (GM) বা Sterile Insect Technique (SIT) চালু করার পরিকল্পনা।

3. স্বাস্থ্যব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি
উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু টেস্ট ও চিকিৎসার পরিসর বাড়ানো।

4. GIS ম্যাপ ও অ্যাপ ব্যবহার করে হটস্পট চিহ্নিতকরণ
প্রযুক্তির মাধ্যমে কোথায় ডেঙ্গু বাড়ছে, তা আগাম জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ।

5. জনসচেতনতা ও শিক্ষা
প্রতিটি ওয়ার্ডে, স্কুলে ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করা।

সরকারি সদিচ্ছার ঘাটতি?

নগর পরিকল্পনাবিদ ও গবেষকরা মনে করেন, প্রতিবার বর্ষা মৌসুমে কিছুদিনের জন্য মশক নিধন অভিযান চালানো হলেও তা বছরের বাকি সময় কার্যত অদৃশ্য থাকে। পরিকল্পনার অভাব, দায়িত্বহীনতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে।পরিশেষে বলা যায় ডেঙ্গু এখন কেবল একটি রোগ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের নাগরিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি গভীরতর চ্যালেঞ্জ। এই চক্র থেকে মুক্তি পেতে হলে, গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা