বিপ্লব সিকদার :
সাংবাদিকতা নিছক কোনো চাকরি বা পরিচয় নয়, এটি রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি এক গভীর দায়বদ্ধতা। সাংবাদিকের কলম যখন সত্য প্রকাশ করে, তখন তা শুধু একটি সংবাদ হয়ে থাকে না, বরং জনতার আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মফস্বল সাংবাদিকতায় আজ যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা শুধু সাংবাদিকদের নয়—পুরো গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।
এখন প্রায়শই দেখা যায়, হাতে একটি ভুয়া পরিচয়পত্র নিয়েই কেউ সাংবাদিক সেজে বসে আছে। তাদের নেই সাংবাদিকতার মৌলিক ধারণা, নেই সত্য ও ন্যায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা। বরং তারা কখনো ক্ষমতাসীনদের তোষণ করছে, কখনো আবার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিজেদের প্রভাব খাটাচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত, পরিশ্রমী ও সৃজনশীল সাংবাদিকরা অবহেলিত হয়ে পড়ছেন।আরও ভয়াবহ বিষয় হলো মফস্বল প্রেসক্লাব ও সংগঠনগুলোতে কথিত সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য। তারা ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকে সংগঠনের নেতৃত্ব দখল করে নেয়, আর সত্যিকারের সাংবাদিকদের কোণঠাসা করে ফেলে। কোনো সাংবাদিক যদি অপরাধ বা অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখেন, তখন এই ভুয়া গোষ্ঠী তাকে হেয় করে, ভয় দেখায়, এমনকি সহকর্মীদের মবের শিকার করাতেও পিছপা হয় না। বাস্তবতায় দেখা যায়, অনেক হামলা ও মিথ্যা মামলার পেছনে এই ভুয়া সাংবাদিকদের ইন্ধন থাকে।এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে মফস্বল সাংবাদিকতার প্রতি জনগণের আস্থা আরও ভেঙে পড়বে। তাই এখনই প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ।কার্ড প্রদানে স্বচ্ছতা আনা: ভুয়া পরিচয়পত্রের দৌরাত্ম্য রোধ করতে হবে।রিপোর্ট যাচাই বাধ্যতামূলক করা: প্রেসক্লাবে সদস্যপদ দেওয়ার আগে সাংবাদিকতার কাজ যাচাই করতে হবে।ভুয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ: কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে অপরাধ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।সৃজনশীল সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা: ট্রেড ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংগঠন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ বিষয়ে কার্যকর হতে হবে।মনে রাখতে হবে পেশাদার সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষা মানেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা। গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে দুষ্ট শাবকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে। আর এর দায়িত্ব শুধু সাংবাদিকদের নয়, সংগঠন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সমাজের প্রতিটি সচেতন মানুষের।
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী