August 28, 2025, 9:36 am

ফাঁদ পেতে মাছ শিকার : বংশপরম্পরার আড়ালে নদী ও সম্পদ ধ্বংস

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা যেখানে মেঘনা ও কাঠালিয়া নদী ঘিরে গড়ে উঠেছে জনপদ। একসময় কৃষি ও মাছ শিকার ছিল এখানকার মানুষের মূল পেশা। কিন্তু সেই মাছ শিকার এখন রূপ নিয়েছে অবৈধ ব্যবসায়। ফাঁদ বা ‘ঝোপ’ পেতে মাছ শিকার এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের বংশপরম্পরার অংশ হলেও, আইন অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ। তবুও প্রভাবশালী মহল বংশগত রীতির আড়ালে এটিকে টিকিয়ে রেখেছে।

 

স্থানীয় সূত্র জানায়, নদী দখল করে এলিট শ্রেণীর অনেক পরিবারই এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে তারা নদীতে বাঁশ, গাছের ডালপালা ফেলে তৈরি করে ঝোপ। এতে একদিকে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়, অন্যদিকে মাছের প্রজনন ও বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হয়। স্থানীয় বনজ সম্পদও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কারণ ঝোপ বানাতে ডালপালা নির্বিচারে কেটে উজাড় করা হচ্ছে।

প্রকৃত জেলেদের বঞ্চনা:

অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত জেলেরা আজ মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন না। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী মহল পর্যন্ত অনেকে এই অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। ফলে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। অনেক ব্যবসায়ী প্রশাসনকে ব্যঙ্গ করে বলেন, “ঝোপের মাছ এত সুস্বাদু, এমন কোনো কর্মকর্তা নেই যে খাননি।”

আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা:

বছরকে বছর  ধরে প্রশাসনের উপস্থিতিতেই চলে আসছে এই ফাঁদ ব্যবসা। পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে প্রতীকী অভিযান চালানো হলেও পরে আবার সব কিছু আগের মতোই চলতে থাকে। সচেতন মহলের প্রশ্ন, প্রশাসন কি আসলেই অক্ষম নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে এ অবৈধ ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখছে?

বিকল্প প্রস্তাব ও বিতর্ক:

এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, “পূর্বপুরুষ থেকে করে আসা ব্যবসা যদি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারে, তবে নদী ইজারা দিলে বৈধ হয়ে যাবে। এতে সরকার রাজস্বও পাবে। যদিও এটি অন্যায়, তবুও কমপক্ষে রাষ্ট্র উপকৃত হবে।”

সচেতন মহলের প্রশ্ন:

নদী ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে-

প্রশাসন কি সত্যিই এ ব্যবসা বন্ধ করতে পারবে?

নাকি ইজারা দিয়ে বৈধতা দেওয়া হবে?

নাকি অভিনব কৌশলে মাঝে মাঝে অভিযান দেখিয়ে আবার আগের মতো চলতেই থাকবে?একদিকে সুস্বাদু মাছের লোভ, অন্যদিকে বংশপরম্পরার আড়ালে দখলবাজি এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে মেঘনা ও কাঠালিয়া নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ, বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত জেলেরা।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা