• মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৬ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে

বিপ্লব সিকদার / ৩১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫

 

বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি। আমাদের গ্রামগুলো শুধু খাদ্য উৎপাদনের কেন্দ্র নয়, এগুলোই দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা ও মানুষদের জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করে। কিন্তু এ শোষণমুক্ত হওয়ার কথা থাকা সমাজ আজও গ্রামের মানুষদের উপর বিভিন্ন মাত্রার শোষণ চালাচ্ছে।

গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের খামার, জমি ও গবাদিপশু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রভাবশালী মহল, দালাল ও অনৈতিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। জমি দখল, জাল দলিল, সালিশের নামে প্রতারণা—এসব ঘটনার মুখোমুখি হয় গ্রামের দরিদ্র মানুষ। অনেকেই আইনি লড়াই করার সামর্থ্য না থাকার কারণে তাদের অধিকার হারিয়ে যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক শোষণও গ্রামীণ জীবনের বড় সমস্যা। মহাজন ও দালালদের উচ্চ সুদ ও কঠোর শর্তে গ্রামের মানুষ ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ে। ধীরে ধীরে তাদের ঘরবাড়ি, জমি ও গবাদিপশু পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা থেকেও প্রভাবশালীরা হরণ করে, ফলে দরিদ্র মানুষ উন্নয়নের থেকে বঞ্চিত থাকে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালীর আধিপত্য গ্রামীণ মানুষের জীবনে স্থায়ী অসুবিধা তৈরি করছে। ক্ষুদ্র বিরোধও বড় সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। গ্রামের মানুষ তাদের অধিকার রক্ষা করতে প্রশাসন ও সরকারের কাছে সরাসরি সমস্যার কথা বলতে পারে না। এতে শোষণের চক্র আরও শক্তিশালী হয়।

গ্রামের মানুষদের আইনি ও তথ্যগত দুর্বলতাও এক বড় সমস্যা। তারা সরকারি ভাতা, কৃষি সহায়তা, ভূমি আইন বা সামাজিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্য যথাযথভাবে জানে না। দালাল ও অনৈতিক ব্যক্তি এই তথ্যের অভাবের সুযোগ নিয়ে তাদের শোষণ চালায়।

শোষণ কমানোর জন্য কয়েকটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। প্রথমত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, সালিশবাজি ও মহাজনী সুদ নিয়ে কঠোর নজরদারি চালাতে হবে। দ্বিতীয়ত, গ্রামের মানুষের জন্য ভূমি সহায়তা ডেস্ক, বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও দ্রুত ডিজিটাল খতিয়ান যাচাই ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তৃতীয়ত, কম সুদে কৃষিঋণ, ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ ও গবাদিপশু ঋণ নিশ্চিত করা দরকার, যাতে মহাজন নির্ভরতা কমে। চতুর্থত, স্থানীয় প্রশাসনকে গ্রাম-ভিত্তিক জনসংযোগ সভা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সরাসরি তাদের সমস্যা জানাতে পারে। সর্বশেষে, গ্রামের তরুণ ও সচেতন জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে, যারা মানুষের জন্য কাজ করবে।

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদি আমরা গ্রামীণ মানুষের অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হই, তবে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন কেবল কাগজে–কলমে সীমিত থেকে যাবে। গ্রামীণ মানুষ নিরাপদ ও স্বাবলম্বী হলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। এটি শুধুই একটি আহ্বান নয়, এটি আমাদের নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।

লেখক : সাংবাদিক।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।

এই জাতীয় আরো খবর দেখুন