• বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৯ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]
সর্বশেষ
মেঘনায় লাইসেন্সবিহীন জ্বালানি বিক্রি: নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে, প্রশাসনের উদ্যোগ জরুরি এভারকেয়ারে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন, বিভ্রান্তি এড়াতে আহ্বান মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের মেধাবী সাইমন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাই মেঘনাবাসীর জীবনযাপনে বিপর্যয় খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের মেডিকেল টিম এভারকেয়ারে যোগ দিল হোমনায় এসিল্যান্ডের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে দুই বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু মেঘনায় মেম্বারের খোয়ার থেকে ৫ গরু চুরি! তেজগাঁও কলেজ সাংবাদিক সমিতির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হলেন রাজু আহমেদ কাঠালিয়া নদীতে নৌ পুলিশের অভিযান পাড়ারবন্ধ এলাকা থেকে দুই চাঁদাবাজ আটক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে

মেঘনায় লাইসেন্সবিহীন জ্বালানি বিক্রি: নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে, প্রশাসনের উদ্যোগ জরুরি

বিপ্লব সিকদার / ৪১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

 

মেঘনা উপজেলায় অকটেন–পেট্রলসহ বিভিন্ন জ্বালানি যেভাবে যত্রতত্রভাবে বিক্রি হচ্ছে, তা শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়—এটি এলাকায় বড় ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে। প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ছাড়াই দোকান, গ্যারেজ কিংবা রাস্তার পাশের টংঘরেও দাহ্য জ্বালানি বিক্রি চলছে প্রকাশ্যেই। প্রশাসনের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর এই অনিয়ম চলতে থাকার পেছনে অদৃশ্য কারণ আছে কি না, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন। রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান উপেক্ষা করে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ এই ব্যবসা যে কোনো সময় ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

অকটেন–পেট্রল এমন সব পদার্থ, যা নির্দিষ্ট নিরাপত্তা মান বজায় রেখে সংরক্ষণ ও বিক্রি করার নিয়ম আছে। অথচ মেঘনার বেশিরভাগ দোকানে প্লাস্টিকের জার, ড্রাম বা অনুপযুক্ত কনটেইনারে এসব জ্বালানি মজুত করা হয়। এতে অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট্ট সিগারেটের আগুন, বৈদ্যুতিক স্পার্ক কিংবা অসতর্কতার কারণে মুহূর্তে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়তে পারে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এসব দোকানে কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই, নেই প্রশিক্ষিত কর্মী, নেই দুর্ঘটনা মোকাবিলার প্রস্তুতি। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতির মাত্রা কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

অনিয়ন্ত্রিত জ্বালানি বাজারের আরেকটি বিপদ হলো চোরাই বা মেশানো জ্বালানি বিক্রি। এতে শুধু রাজস্ব ক্ষতিই হয় না, যানবাহনের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়ে। নিম্নমানের জ্বালানির কারণে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা বা ট্রলারের ইঞ্জিনে তাৎক্ষণিক সমস্যা দেখা দিয়ে মাঝপথে থেমে যাওয়া বা আগুন ধরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া শিশু–কিশোরদের এসব বিপজ্জনক কাজে যুক্ত করা হলে তাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেকে অজান্তেই জ্বালানির গ্যাসে আক্রান্ত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।

এই সমস্যার পরিবেশগত দিকটিও উপেক্ষা করা যায় না। জ্বালানি ছড়িয়ে পড়লে মাটি ও পানি দূষিত হয়, যা কৃষিজমি ও স্থানীয় পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। নদীর ধারে বা খালের পাশে এসব দোকান হলে পানি দূষণের ঝুঁকি আরও বাড়ে। অথচ পরিবেশ আইন এবং নিরাপত্তা নীতিমালা কার্যকর করার দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করছে—এমন চিত্র দেখা যায় না।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো প্রশাসনের নীরবতা। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, নিয়মিত পরিদর্শন, লাইসেন্স যাচাই—এসবই প্রশাসনের রুটিন কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু বছরের পর বছর অনিয়ম চলতে থাকায় সাধারণ মানুষ মনে করছে, হয়তো কোনো অদৃশ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাই এসব ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখছে। আইন সবার জন্য সমান, কিন্তু বাস্তবে তা প্রয়োগ না হলে আইনের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পায়।

এই পরিস্থিতিতে এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। প্রশাসনের উচিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সব দোকানের অনুমোদনপত্র, স্টোরেজ নিরাপত্তা ও অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা যাচাই করা। অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ দোকানগুলো বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। যাঁরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে লাইসেন্সবিহীন দোকান থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধ করবেন, তারাও এই উদ্যোগের অংশ।

মেঘনা উপজেলায় নিরাপদ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা এবং দুর্ঘটনা রোধের জন্য এ সমস্যাকে এখনই গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা প্রয়োজন। প্রশাসনের দৃঢ়তা ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় এই অনিয়ম বন্ধ করা গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে এলাকা রক্ষা পাবে। একজন নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা উপেক্ষা করতে পারি না এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।

লেখক-  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক বনফুল।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।

এই জাতীয় আরো খবর দেখুন