মেঘনা উপজেলা বিএনপি আজ এমন এক রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে আটকে গেছে, যেখানে শত্রু শুধু বাইরে নয়, দলের ভেতরেও গভীরভাবে প্রোথিত। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, প্রতিদ্বন্দ্বী মহলের প্রভাব, ভিন্ন মতাদর্শের পরিকল্পিত অনুপ্রবেশ এবং প্রধান পদ দখলে বহিরাগত অর্থায়ন সব মিলিয়ে সংগঠনটি চতুর্মুখী স্বরযন্ত্রের শিকার। যে চেইন অব কমান্ড একসময় মেঘনা বিএনপির শক্তির ভিত্তি ছিল, তা এখন কার্যত ভেঙে পড়েছে। নেতৃত্ব আজ বিভক্ত, কমিটি আজ নড়বড়ে, আর সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় মাঠের কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে।
ধানের শীষের প্রতি মানুষের অগাধ ভালোবাসা মেঘনায় অটুট। সভা-সমাবেশে যেমন ঢল নামে, তেমনি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও থাকে যে বিএনপি সুসংগঠিত হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই গণসমর্থনকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করে কিছু নেতা নিজেদের চারপাশে বডিগার্ড আর তোষামোদে ঘেরা দেয়াল তুলে ফেলেছেন। এই নেতারা সংগঠন চায় না, চায় ব্যক্তিস্বার্থকে টিকিয়ে রাখতে। তাদের কাছে দলের ত্যাগীরা অপ্রয়োজনীয়, আর অর্থবলে ভরপুর অনুপ্রবেশকারীরা “যোগ্য নেতা”।
বহুদিন ধরে মেঘনা বিএনপির ভেতরে কিছু ব্যক্তি ‘ঘষেটি বেগম’ প্রবণতায় নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। যেন থানা কমিটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানানোর প্রতিযোগিতা চলছে। এসব রাজনৈতিক অনাচার সাধারণ মানুষের চোখ এড়ায় না। তারা প্রকাশ্যে বলতে ভয় পায়, কিন্তু ভোটের ব্যালটের সামনে মানুষই সবচেয়ে নির্ভীক—এ সত্য দল ভুলে গেলে চলবে না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনটি হবে শক্তির নয়, হবে জনমতের। সুষ্ঠু ভোট হলে ক্ষুদ্র দলগুলোর প্রার্থীও উল্লেখযোগ্য কাস্টিং ভোট কেড়ে নিতে পারে। মেঘনার ১১২ হাজার ভোটারের প্রেক্ষাপটে ৩০ শতাংশ ঢাকামুখী জীবনধারার ভোটারদের আচরণ অন্যরকম; ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট অত্যন্ত বাস্তবিক শক্তি; আর আওয়ামী লীগের মাঠের অবস্থানও কারো অজানা নয়। তাই ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল নেতৃত্ব কিংবা ভুল সমীকরণ—যেকোনো কিছুই মেঘনা বিএনপির কাঙ্ক্ষিত ফলকে ব্যাহত করতে পারে।
এখন প্রয়োজন কঠোর অনুসন্ধান, সংবেদনশীল মূল্যায়ন এবং সৎ সিদ্ধান্ত। দায়িত্বশীলকে দায়িত্ব দেওয়া, অনুপ্রবেশকারীদের বের করে দেওয়া এবং স্পনসর-নির্ভর নেতৃত্বকে নিয়ন্ত্রণে আনা ছাড়া এই সংগঠনকে পথে ফেরানোর আর কোনো পথ নেই। অন্যথায় জয় আসবে হয়তো, কিন্তু সেটা হবে অসম্মানজনক জয় যা দলকে শক্তিশালী করবে না, বরং দুর্বল করবে।
মেঘনা বিএনপির সংকটের মূল শত্রু আওয়ামী লীগ নয়; মূল শত্রু হলো ভুল নেতৃত্ব, স্বজনপ্রীতি, অর্থনির্ভর রাজনীতি এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন। এখনই সময় শুদ্ধি, শৃঙ্খলা ও সংগঠনের পুনর্জাগরণের। দ্বিধা করলে শুধু রাজনীতি হারাবে না, মানুষের আস্থাও হারিয়ে যাবে।
লেখক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক বনফুল।