• শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১০ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]
সর্বশেষ
মেঘনায় বিশেষ স্থানে সিসি ক্যামেরা ছাড়া নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে মেঘনায় সন্ত্রাসের ছায়া, সুষ্ঠু ভোট হুমকিতে অটোরিকশা ছিনতাইকে কেন্দ্র করে শান্ত দাস নিহত হয়েছে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের কুমিল্লা–১: বিএনপি নেতাকর্মীদের আচরণবিধি মেনে চলার আহবান কঠোর নির্বাচনী আচরণবিধি জারি করল নির্বাচন কমিশন আধার রাতে হোমনায় ভুট্টা খেতে অজ্ঞাত যুবকের গলাকাটা লাশ ৩০০ আসনের নতুন সীমানায় কুমিল্লার আসন অপরিবর্তিত ঢাকা -৫ আসনে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে উপদেষ্টা হলেন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা নির্বাচন ও গণভোট পরিচালনায় ৬৯ রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ কুমিল্লার ১১ আসনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, দায়িত্ব বণ্টন সম্পন্ন

মেঘনায় সন্ত্রাসের ছায়া, সুষ্ঠু ভোট হুমকিতে

বিপ্লব সিকদার / ৪৩ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

 

মেঘনা উপজেলা ক্রমেই পরিণত হচ্ছে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার জনপদে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ গড়ে তোলার কথা, সেখানে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—চিহ্নিত ও ছায়া সন্ত্রাসী, অপরাধীচক্র এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের দৌরাত্ম্যে গোটা উপজেলা কার্যত জিম্মি হয়ে পড়ছে।রাজধানীর সন্নিকটে নদীবেষ্টিত এই উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধীদের জন্য সুবিধাজনক। নদীপথ, চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রামগুলো অপরাধীচক্রের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগাযোগ দিন দিন বাড়ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, অস্ত্রের মহড়া ও গোপন লেনদেন এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মতাদর্শিক বিভাজনের সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী একটি মহল অপরাধীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ডান-বাম চেতনার মিশ্রণে সুবিধাভোগীরা নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করছে। আচরণে ভদ্র, কথাবার্তায় নম্র—কিন্তু আড়ালে ভয়ংকর এসব মুখোশধারী চরিত্রই এলাকার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বহিরাগত ও অপরিচিত ছদ্মবেশী তরুণদের আনাগোনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তারা কেউ শ্রমিক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউবা রাজনৈতিক কর্মীর পরিচয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাত নামলেই নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় গোপন বৈঠক, অর্থ লেনদেন এবং অপরাধ পরিকল্পনার আলামত মিলছে বলে দাবি একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, স্থানীয় প্রশাসনের ভেতরে থাকা কিছু ‘অতি পুরনো’ প্রভাবশালী ব্যক্তির ভূমিকা। দীর্ঘদিন একই জায়গায় দায়িত্ব পালনের সুবাদে তারা এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মকর্তা নবাগত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নানা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলছেন। বিনিময়ে অপরাধী ও সুবিধাভোগী মহলের কাছ থেকে তারা গোপন সুবিধা গ্রহণ করছেন বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশেষ একটি মহল পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ অস্থিতিশীল রাখতে অর্থ বিনিয়োগ করছে। তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করে তাদের হাতে নগদ টাকা, মোবাইল, মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে অপরাধীচক্রে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে একদিকে অপরাধ বাড়ছে, অন্যদিকে সমাজে তৈরি হচ্ছে ভয়ংকর ভবিষ্যৎ সংকট।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যেও উত্তেজনা ও আবেগপ্রবণতা বাড়ছে। স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, এই আবেগই অপরাধীচক্রের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। নির্বাচনী মাঠ গরম করতে তারা সংঘর্ষ, ভয়ভীতি ও গুজব ছড়াতে পারে—যা শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোটের পথকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।

স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে  ‘হাদি’র মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে এই উপজেলায় ।  মানুষের মনে তাজা আতঙ্ক হিসেবে রয়ে গেছে। তাই বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

তাদের মতে, সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত নজরদারি বৃদ্ধি, চিহ্নিত ও ছায়া সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান অভিযান এবং প্রশাসনের ভেতরের দুর্নীতিবাজ ও পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের দ্রুত সরিয়ে দেওয়াই এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল আচরণ, সাধারণ মানুষের সতর্কতা এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতাও অপরিহার্য।মেঘনা উপজেলা যদি সত্যিই একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর নির্বাচন দেখতে চায়, তবে অপরাধীচক্রের এই অদৃশ্য বলয় ভাঙতেই হবে। নচেৎ আতঙ্কের ছায়ায় ঢাকা এই জনপদে সুষ্ঠু ভোট শুধু প্রত্যাশাই থেকে যাবে বাস্তবতা আর হয়ে উঠবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।

এই জাতীয় আরো খবর দেখুন