ইগো—শব্দটি ছোট, কিন্তু এর প্রভাব ভয়াবহ। এটি কোনো সংক্রামক ব্যাধি নয়, তবুও সমাজে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইগো মানুষের চোখে অদৃশ্য থাকে, কিন্তু সম্পর্ক ভাঙার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা সবচেয়ে স্পষ্ট। এটি মানুষকে মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, হৃদয়ের মাঝে দেয়াল তোলে এবং ধীরে ধীরে সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করে ফেলে।
ইগোর সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো—এটি মানুষকে আত্মসমালোচনার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে। ভুল করেও মানুষ তখন নিজেকে নির্দোষ ভাবতে শুরু করে। ক্ষমা চাইতে অপমান মনে হয়, আর ক্ষমা করা হয়ে ওঠে দুর্বলতার লক্ষণ। ফলে সম্পর্কের জায়গায় জায়গায় জন্ম নেয় ভুল বোঝাবুঝি, অবিশ্বাস ও নীরব দূরত্ব।
পরিবার থেকে সমাজ—সব স্তরেই ইগোর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্কে, সহকর্মী কিংবা রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের মাঝেও ইগো বিভাজনের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় দেখা যায়, আদর্শ বা লক্ষ্য এক হলেও ইগোর সংঘাতে সেই পথচলা থেমে যায়। ব্যক্তিগত জয় বড় হয়ে ওঠে, সমষ্টিগত স্বার্থ চাপা পড়ে যায়।
ইগো মানুষকে শেখায়—‘আমি ঠিক, তুমি ভুল’। এই মানসিকতা থেকেই জন্ম নেয় আধিপত্যবাদ, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা। সমাজে মতের ভিন্নতা তখন আর স্বাভাবিক থাকে না; তা হয়ে ওঠে শত্রুতা। ফলে গণতন্ত্র, সহাবস্থান ও মানবিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইগোর বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে নম্রতা। নম্রতা মানুষকে ছোট করে না, বরং বড় করে তোলে। নিজের ভুল স্বীকার করা, অন্যের কথা শোনা এবং প্রয়োজন হলে ক্ষমা চাওয়ার সাহসই প্রকৃত শক্তির পরিচয়। যে মানুষ ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে মানুষই সম্পর্ক রক্ষা করতে পারে, সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে।
ইগো যদি হয় রোগ, তবে এর চিকিৎসা আত্মশুদ্ধি। ব্যক্তি থেকে সমাজ—সবার ভেতরেই এই চর্চা প্রয়োজন। নচেৎ ইগোর বিষে আমরা একে অপরের কাছ থেকে আরও দূরে সরে যাব, আর মানবিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে।