মেঘনা উপজেলায় করাত কল এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড নয়—এটি যেন একটি সংগঠিত নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। বাজার এলাকা ও উপজেলার প্রধান সড়ক ঘিরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব করাত কলে প্রতিদিন নির্বিচারে কাটা হচ্ছে দেশি ও বিদেশি মূল্যবান গাছ। এতে পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি সরকারি আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালা প্রকাশ্যেই লঙ্ঘিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিকাংশ করাত কলের নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা বন বিভাগের অনুমোদন। কাঠের বৈধ উৎস সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র ছাড়াই চলছে কাঠ চেরা ও মজুদ। রাতের আঁধারে কিংবা দিনের আলোতেই ট্রাক ও পিকআপে করে কাঠ আনা-নেওয়া হচ্ছে, অথচ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো তদারকি চোখে পড়ে না।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান থেকে খুব দূরে নয় এসব করাত কলের অনেকগুলো। তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, এতসব অবৈধ কার্যক্রম কীভাবে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চলছে? স্থানীয়দের ভাষায়, প্রভাবশালী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের অদৃশ্য ছত্রছায়ায় এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে।
পরিবেশবিদদের মতে, এভাবে নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে এলাকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, বাড়ছে তাপমাত্রা, কমছে ছায়া ও সবুজায়ন। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়বে কৃষি, স্বাস্থ্য ও জনজীবনে। অথচ পরিবেশ রক্ষায় যেসব ভ্রাম্যমাণ আদালত ও নিয়মিত অভিযান থাকার কথা, সেগুলোর কোনো কার্যকর উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছে—প্রশাসন কি সত্যিই বিষয়টি জানে না, নাকি জানার পরও অজানা কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে? পরিবেশ রক্ষায় আইন প্রয়োগের বদলে দায়সারা মনোভাব কি অবৈধ করাত কলের বিস্তারকে আরও উৎসাহিত করছে?