• বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]

শোকের ভারে নত একাই দেশনায়ক তারেক রহমান

বিপ্লব সিকদার / ৪৫ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজসিক ও ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র কয়েক দিনের মাথায় গভীর শোকে আচ্ছন্ন বাংলাদেশ। যিনি ফিরে এসেছিলেন মানুষের ভালোবাসা, প্রত্যাশা আর সংগ্রামের প্রতীক হয়ে—আজ সেই মানুষটিই দাঁড়িয়ে আছেন ব্যক্তিগত জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ শূন্যতা নিয়ে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন—তিনি এক শোকাহত সন্তান, একা দাঁড়িয়ে থাকা এক ইতিহাস।তারেক রহমানের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই যেন রাষ্ট্রীয় রাজনীতির নিষ্ঠুর বাস্তবতার সাক্ষ্য। পিতার হত্যাকাণ্ডে শৈশবেই হারিয়েছেন নিরাপত্তার ছায়া। পরে সহোদর আরিফ রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়ে পারিবারিক বন্ধন। আর এবার, দীর্ঘ চিকিৎসা ও সংগ্রামের পর হারালেন তাঁর মা—একজন জননী, যিনি শুধু পরিবারের নন, বরং একটি রাজনৈতিক যুগের প্রতীক ছিলেন। এই তিনটি হারানো কেবল ব্যক্তিগত নয়, এগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বেদনাময় অধ্যায়।২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল নিছক একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়। তা ছিল দীর্ঘ নিপীড়ন, নির্বাসন ও চরিত্রহননের বিরুদ্ধে জনগণের নীরব প্রতিবাদ। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে রাজপথ—সবখানে মানুষের ঢল প্রমাণ করেছিল, ক্ষমতা চলে যেতে পারে, কিন্তু মানুষের হৃদয় থেকে কাউকে মুছে ফেলা যায় না। সেই প্রত্যাবর্তনের রেশ কাটতে না কাটতেই মায়ের মৃত্যু যেন পুরো জাতিকে আবার শোকে নিমজ্জিত করল।মায়ের জানাজা ও শোকানুষ্ঠানে তারেক রহমানের নীরব উপস্থিতি ছিল হাজার শব্দের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। সেখানে কোনো উচ্চকণ্ঠ আহাজারি ছিল না, ছিল না রাজনৈতিক বক্তব্য—ছিল শুধু এক সন্তানের নীরব কান্না, যা পুরো বাংলাদেশ অনুভব করেছে। মা–হারা সন্তানের বেদনা যে কত গভীর, তা বোঝাতে ভাষা ব্যর্থ হয়। এই শোক কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয় নয়, এটি একটি জাতির আবেগের জায়গা।তবু বাস্তবতা নির্মম। তারেক রহমান আজ শুধু একজন সন্তান নন, তিনি একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, নির্যাতিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যক্তিগত শোককে উপেক্ষা করে তাঁকেই নিতে হবে ঐতিহাসিক দায়িত্ব। কারণ এই বাংলাদেশ এখন শুধু সমবেদনা জানাতে চায় না, এই বাংলাদেশ দিকনির্দেশনা চায়।রাজনীতির দীর্ঘ পথচলায় তারেক রহমান বহুবার একা হয়েছেন। কারাগার, নির্বাসন, অসুস্থতা—সবই তাঁকে একা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই তিনি ফিরে এসেছেন জনগণের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে। আজও ব্যতিক্রম নয়। মা নেই, পিতা নেই, ভাই নেই—তবু তাঁর পাশে রয়েছে কোটি মানুষের ভালোবাসা। এটাই তাঁর রাজনৈতিক শক্তি, এটাই তাঁর নৈতিক পুঁজি।
বাংলাদেশ আজ বাকরুদ্ধ। একদিকে শোক, অন্যদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে দেশ আজ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এই সময় তারেক রহমানের কণ্ঠই হয়ে উঠতে পারে আশার ভাষা। তাঁর নীরবতাও আজ এক ধরনের বক্তব্য, তবে জাতি অপেক্ষা করছে সেই মুহূর্তের—যখন তিনি শোককে শক্তিতে রূপান্তর করবেন।ইতিহাস বলে, জিয়া পরিবার কখনো শোকের কাছে পরাজিত হয়নি। ১৯৭৫–এর পর যেমন দেশ পুনর্গঠনের নেতৃত্ব এসেছিল শহীদ জিয়ার হাত ধরে, তেমনি আজকের বাংলাদেশও তাকিয়ে আছে তাঁর উত্তরসূরির দিকে। শোকের অন্ধকার ভেদ করেই হয়তো আবার জ্বলে উঠবে সংগ্রামের আলো।মায়ের অবর্তমানে তারেক রহমানের কাঁধে দায়িত্ব আরও ভারী। তাঁকেই হতে হবে সেই কণ্ঠ, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবে। তাঁকেই হতে হবে সেই আশ্রয়, যেখানে ভীত মানুষ সাহস পাবে। আজ তাঁর ব্যক্তিগত বেদনা আর জাতীয় দায়িত্ব এক বিন্দুতে মিলেছে।মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা—তিনি যেন দেশনায়ক তারেক রহমানকে নেক হায়াত, ধৈর্য ও দৃঢ় নেতৃত্ব দান করেন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।
আমীন।

লেখক – সাংবাদিক।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।

এই জাতীয় আরো খবর দেখুন