November 1, 2024, 8:26 am

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার আয় ২ কোটি, সম্পদ ১২ কোটির

ডেস্ক রিপোর্ট : 

গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) প্রকল্পের পরিচালক ড. এম এম কামরুজ্জামান চলতি মাসে বদলি হয়ে গাজীপুরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়ের তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তৃতীয় গ্রেডে তিনি বর্তমানে বেতন পান ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা। ১৯৯২ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। সে সময় তাঁর মূল বেতন ছিল ৩ হাজার ৭২৫ টাকা। সূত্র : দৈনিক আজকের পত্রিকা

চাকরিজীবনের ৩১ বছর প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা বেতন ধরা হলে এখন পর্যন্ত এম এম কামরুজ্জামানের মোট আয় আনুমানিক ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অথচ তাঁর সম্পদের হদিস পাওয়া গেছে কয়েক কোটি টাকার। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি এসব সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সরেজমিনে তাঁর প্রায় ১২ কোটি টাকার বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, ফরিদপুর শহর, রগুনন্দনপুর, ঝিলটুলি, হারুকান্দি, বাইপাস সড়ক, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রয়েছে এসব সম্পদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এম এম কামরুজ্জামান গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এম এম আবুল হোসেনের ভাই। অন্যদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ওরফে ইছার ভগ্নিপতি। আর তাই যে দল ক্ষমতায় থাকুক না কেন, কামরুজ্জামান দাপটের সঙ্গেই থাকেন।

গোপন সূত্রে পাওয়া নথি ধরে ফরিদপুর পৌরসভার রগুনন্দনপুর মহল্লার হাউজিং প্রকল্পের ভেতরে ৮ শতাংশ জমির ওপরে চারতলা একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। ০০১-২৯-০২ হোল্ডিং নম্বরের নামফলকে বাড়ির মালিক হিসেবে কামরুজ্জামানের স্ত্রী সৈয়দা শামছিয়াহ আক্তারের নাম লেখা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকায় প্রতি শতাংশ জমির বাজারমূল্য ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। সে হিসাবে ৮ শতাংশ জমির দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া চারতলা বাড়িটির আনুমানিক দাম ১ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ফরিদপুর আয়কর অফিসের কাছে পাশাপাশি ১০ তলা দুটি বাড়ির দেখা মেলে। একটির নাম ‘লাক্সারি প্যালেস’ এবং অপরটি ‘বর্ণমালা-৭’। লাক্সারি প্যালেসে কামরুজ্জামানের অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে কথা হয় তত্ত্বাবধায়ক বাবলু রায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, এই বাড়ির চারতলায় দুটি এবং পাশের বর্ণমালা-৭-এ আরও দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে কামরুজ্জামানের। ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া। মালিক মাঝেমধ্যে আসেন। তত্ত্বাবধায়ক জানান, ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের ওই চারটি ফ্ল্যাটের দাম প্রায় ২ কোটি টাকা।

বর্ণমালা-৭-এ পরিচয় গোপন করে বাড়ি ভাড়া নিতে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে কথা হয় ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক জয়ের সঙ্গে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কামরুজ্জামানের ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তাঁর দুটি ফ্ল্যাটের কোনোটি ফাঁকা নেই।

ওই দুই ভবনের সামনে থেকে ফরিদপুর বাইপাস সড়ক হয়ে গোপালগঞ্জে ফেরার পথে ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের পাশে মূল রাস্তার পাশেই বালু ভরাট করা জায়গায় একটি বাগানের দেখা মেলে। এর পাশের এক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জায়গাটির মালিক কামরুজ্জামান নামে এক সরকারি কৃষি কর্মকর্তা। সেখানে প্রায় ২৪ শতাংশ জমি রয়েছে; যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

কামরুজ্জামানের সম্পত্তির খোঁজে ঢাকায়ও যান এই প্রতিবেদক। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার পুরোনো পোস্ট অফিসের পাশে ৪ নম্বর রোডে সামিট খালেদা অ্যাপার্টমেন্টের (বাড়ি নম্বর ৩০/এফ) তৃতীয় তলায় কামরুজ্জামান সপরিবারে থাকেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।

তৃতীয় তলার ৩ নম্বর ফ্ল্যাটটি কামরুজ্জামান নিজ নামে কেনার তথ্য পাওয়া গেল ফ্ল্যাট মালিকদের তালিকা থেকে। ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের দাম আনুমানিক দেড় কোটি টাকা।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের রোয়ার বিলে গিয়ে দেখা যায় শতবিঘার মাছের ঘের। এর অর্ধেক কামরুজ্জামানের বলে জানা যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে। ওই এলাকায় জমির মূল্য বিঘাপ্রতি ৫ লাখ টাকা হিসাবে ঘেরে কামরুজ্জামানের অংশের দাম আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা। এ ছাড়া একই উপজেলার চরপদ্মবিলা এলাকায় ৭ বিঘা জমির ওপর কামরুজ্জামানের ফলের বাগান রয়েছে; যার বাজারমূল্য কোটি টাকার ওপরে।

এম এম কামরুজ্জামানের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের সরাসরি আলাপচারিতায় তিনি তাঁর সব সম্পত্তির কথা স্বীকার করেন, যার গোপন অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি বলেছেন, যেসব স্থানে চাকরি করেছেন, সেখানেই সম্পত্তি কিনেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, অসৎ উপায়ে গোপালগঞ্জ থেকে এক টাকাও নিইনি। আমি টাকা কামাই করছি অন্য জায়গা থেকে ঠিক আছে, এটা অস্বীকার করি না। সিলেটে চাকরি করেছি, চিটাগাংয়ে চাকরি করেছি, ফরিদপুরে চাকরি করেছি, কুষ্টিয়ায় চাকরি করেছি। কোনো দিন কারও সঙ্গে সমস্যা বাধে নাই। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে আসছি। আমি ঠান্ডা মাথার লোক, ঠান্ডাভাবে চলাফেরা করি।’

ফ্ল্যাটের বিষয়ে কথা হলে কামরুজ্জামান বলেন, ‘কুষ্টিয়া, সিলেট, চিটাগাং সব জায়গায়ই ফ্ল্যাট আছে। চিটাগাং তো পাহাড়ই কিনে ফেলাতে গেছিলাম। চিটাগাং পাহাড় তো সরকারি সম্পত্তি; তাই লাইন করে ১ একর জায়গা নিয়েই ফেলাইছিলাম। এসি ল্যান্ড আমার খুব কাছের ছিল, তাই নিয়েই ফেলাইছিলাম। পরে বড় ভাই জানতে পেরে আমাকে ধমক দেছে; তার পরে আর নেই নাই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সহসভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি একটি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেয়। এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে। তাই সরকারি বা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদে থেকে যাঁরা দুর্নীতি করছেন, তাঁদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি যাঁরা করে, তাঁদের বিষয়গুলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আমলে নিয়ে তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা