October 22, 2024, 2:55 pm

আজ ড.মোশাররফ হোসেনের ৭৯ তম জন্মদিন : দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা

শাহ আক্তারুজ্জামান।। 

আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) কিংবদন্তি বর্ষীয়াণ রাজনীতিক,বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৭৯তম জন্মদিন! তিনি ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ড.মোশাররফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, গবেষক, প্রথিতযশা ভূ-বিজ্ঞানী, লেখক ও কলামিষ্ট।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মবহুল জীবনে তাঁর ঝুলিতে অর্জনের ভাণ্ডার বিশাল। ৩মেয়াদে মন্ত্রী ও ৪বার এমপি থাকাকালে নির্বাচনী এলাকায় দাউদকান্দি পৌরসভা ও নতুন উপজেলা তিতাস প্রতিষ্ঠা, মেঘনা উপজেলা বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ,রাস্তা-ঘাট,ব্রীজ- কালভার্ট নির্মাণ, গ্রামীণ অবকাঠামো খাতসহ সর্বক্ষেত্রে সহস্রাধিক কোটি টাকার যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছেন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও মৎস্য খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি দেশ-বিদেশে স্বর্ণপদকসহ প্রচুর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

নিজ জন্মদিনে এক প্রতিক্রিয়ায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সর্বক্ষেত্রে বিপর্যস্ত দেশকে রক্ষার জন্য আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে দীর্ঘ ১৬ বছর আন্দোলন করেছি, অনেক নির্যাতিত হয়েছি। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। মাঝে আমি অসুস্থ ছিলাম, সকলের দোয়ায় আল্লাহ আমাকে সুস্থ করেছেন। রাস্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার এই পরিবর্তন দেখার সুযোগ দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আজকের এই দিনে দাউদকান্দি, তিতাস, মেঘনা ও হোমনা উপজেলাবাসী, দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বিএনপির নেতা-কর্মীসহ প্রিয় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই। যাতে আগামী দিনগুলোতে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে পারি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

ড.মোশাররফ কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইস্কুল থেকে ‘৬২ সালে মেট্রিকুলেশন, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে ‘৬৪ সালে আই.এসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘৬৮ সালে এম.এসসি ডিগ্রী অর্জন করেন।’৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগে জুনিয়র প্রভাষক পদে যোগ দেন এবং একই বছর কলম্বো-প্লান স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার (Ph.D) জন্য লণ্ডন(বিলেত) গমন করেন।তিনি ‘৭০ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে এম.এসসি, ‘৭৩ সালে ডিআইসি ডিপ্লোমা এবং ‘৭৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন।৭৫ সালে বিলেত থেকে দেশে ফিরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ‘৮৭ থেকে ‘৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ‘৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য তিনি ঢাবি’র শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করেন।দেশবরেণ্য আলোকিত রাজনীতিক ড.মোশাররফ । ছাত্রজীবনেই তাঁর মেধা, মননশীল চিন্তা, মানবিক গুণাবলী ও নেতৃত্বের যোগ্যতা আলোর জ্যোতির ন্যায় দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।তিনি ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এজিএস এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের ভিপি নির্বাচিত হন।মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির জন্য খন্দকার মোশাররফ ‘৭১সালে বিলাত প্রবাসী বাঙালীদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন।
“প্রবাসে বিশ্বজনমত গঠন” ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাঁর নাম গেজেটভূক্ত করা হয়েছে।অবশ্য স্বাধীনতার পর প্রকাশিত প্রথম গেজেট থেকেই ড.মোশাররফ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভূক্ত রয়েছেন।
তিনি দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে সর্বদাই নায়কোচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।এক দফার গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও বীরোচিত ভূমিকা রেখেছেন। ড.মোশাররফ বিভিন্ন সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তিনি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মামলায় ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৭,২০১২ এবং ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ বছর কারাভোগ করেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ‘৭৯ সালে ঢাবি’র মেধাবী শিক্ষক ড.মোশাররফ বিএনপি’র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ‘৯৪ সাল থেকে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
ড.মোশাররফ কুমিল্লা-২ আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ‘৯১-‘৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ,জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী, ‘৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড.মোশাররফ দাউদকান্দির উত্তরাঞ্চলে ‘তিতাস উপজেলা’ প্রতিষ্ঠা,দাউদকান্দিকে পৌরসভায় উন্নীত ও বিশাল পৌরভবন নির্মাণ, শহীদনগরে ট্রমা সেন্টার,নবগঠিত মেঘনা উপজেলা বাস্তবায়ন, দাউদকান্দি সদরে ২০ শয্যার হাসপাতাল, তিতাস ও মেঘনায় উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন,২ টি ৫০ শয্যার হাসপাতাল ও ২টি থানা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ,ঢাকারগাঁওয়ে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপনসহ সর্বক্ষেত্রে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন। এতে এলাকায় অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। এই উন্নয়নের সুফল জনগণ এখন ভোগ করছেন।
ড.মোশাররফ ৩ সহস্রাধিক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান করেছেন। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে গোমতী নদীতে ‘দাউদকান্দি সেতু’ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।আলোকিত সমাজ গঠনের মহান ব্রত নিয়ে তিনি নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন, ড.মোশাররফ ফাউণ্ডেশন। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২টি কলেজ,২টি হাইস্কুল,১টি গার্লস হাইস্কুল,১টি দাখিল মাদরাসা,১টি নূরানী মাদরাসা ও এতিমখানা কমকমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেছেন । এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি ও বোর্ড পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফলের মাধ্যমে এলাকার শিক্ষাব্যবস্থাকে করেছে আলোকিত ও সমৃদ্ধ।
ড.মোশাররফ ‘প্লাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ পদ্ধতি’র উদ্ভাবক। মৎস্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদক লাভ করেন।
২০০৩ সালে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৭ তম সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর সভাপতিত্বে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) গৃহীত হয়। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ড.মোশাররফকে ‘World no tobacco award-2004’ পদকে ভূষিত করেন। ভূ-তত্ত্ব বিষয়ে স্ট্রাকচারাল এ্যানালাইসিসে তাঁর মৌলিক উদ্ভাবন ‘Hossains method of extension’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘প্লাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ: দাউদকান্দি মডেল’, ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘এই সময়ের কিছু কথা’,’ ‘ফখরুদ্দিন- মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’, ‘রাজনীতির হালচাল’, ‘সময়ের ভাবনা’, ‘জরুরী আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭ ও ২০০৮)’ ‘মূল্যবোধ অবক্ষয়ের খণ্ডচিত্র’, ‘প্রগতি ও সত্যের সন্ধানে’, ‘করোনাকালে বাংলাদেশঃ সংক্রমণের দশ মাস’, ‘স্মৃতির অ্যালবাম’ এবং ‘আমার রাজনীতির রোজনামচা’ নামের ১৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।বর্ষীয়ান নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তিতাসের প্রতিষ্ঠাতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নেতাকর্মীরা শুভেচ্ছাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  সুস্থতা ও দীর্ঘ জীবনের জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা