স্টাফ রিপোর্টার :
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত ছয় কমিশনের কাজ শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো সংলাপ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি-জামায়াতসহ ৮টি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশ নেয়। সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপ দাবি করেছে সরকারের কাছে। একই সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে বিতর্কিত দুই-একজন উপদেষ্টাকে বাদ দেয়া, দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তাকারী প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সরানো, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে ব্যবস্থা নেয়া, পতিত সরকারের মন্ত্রী- এমপিদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে যারা সহায়তা করেছেন তাদের চিহ্নিত করা, আসন্ন দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখা, পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির পেছনে কারা তাদের চিহ্নিত করা, নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। সংলাপ শেষে রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে সরকার বলেছে- ৬টি কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবেন। তারপর তাদের রিপোর্ট নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবে। এরপর সংস্কারের বিষয়ে সবাই যে ঐক্যে আসবেন সেটার ওপর নির্ভর করবে কতোদিন সময় লাগবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের কাজ এগিয়ে যাবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশন গঠনসহ সব কাজ এগিয়ে যাবে। যেন দ্রুতই একটা নির্বাচন দিয়ে দেয়া যায়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন দাবি ও সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।
দুপুর আড়াইটায় শুরু হওয়া সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলো হলো- বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, গণতান্ত্রিক মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণঅধিকার পরিষদ। সংলাপে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বিএনপিকে দিয়ে সংলাপ শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা। সংলাপ শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে- সে ব্যাপারে একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। তিনি বলেন, আমরা এনআইডি কার্ড যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করতে আইন করা হয়েছিল, সেটাকে অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল করতে বলেছি। এছাড়া বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশনে না যায় সে বিষয়ে বলেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনারসহ ছিল ভুয়া ও ব্যর্থ নির্বাচন, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদেরকে বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান উনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার।
বিএনপি’র দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়গুলো অত্যন্ত সহযোগিতার সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি। পাশাপাশি সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’- অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসনের ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর কর্মরত আছেন তাদের অপসারণ, জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল, ফ্যাসিবাদের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের কথা বলা হয়েছে বিএনপি’র পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দু’-একজন আছেন যারা বিপ্লব-গণঅভ্যুত্থানের যে মূল স্পিরিটকে ব্যাহত করছে তাদেরকে সরানোর কথা বলেছি। আমরা গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি। বিচার বিভাগের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। হাইকোর্ট বিভাগে বেশির ভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে এবং প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে আছেন। এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। দলকানা কিছু বিচারক আছেন তাদের অপসারণের কথা বলেছি। একই সঙ্গে অতিদ্রুত পিপি ও জিপি নতুনভাবে নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি অথবা হত্যায় সুনির্দিষ্ট মামলায় যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে- তাদেরকে জামিন দেয়া হচ্ছে। এটা খুব উদ্বেগজনক। এই বিষয়টা আমরা দেখার জন্য বলেছি। ২০০৭ সালে থেকে শেখ হাসিনার শাসনামলে সকল মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি। মির্জা ফখরুল বলেন, শুনতে পাই, কিছু জায়গায় সাবেক মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। কীভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছে এই বিষয়গুলো দেখার জন্য বলেছি। আজকে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। ভারতে থেকে তাকে কেন্দ্র করে সমস্ত ক্যাম্পেইন চলছে, যে সমস্ত অপপ্রচার চলছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে। বিএনপি মহাসচিব পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতার সৃষ্টি পেছনে কারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। বলেন, জাতিসংঘের একটি দল এসেছে বাংলাদেশে। সেই দলকে যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে আছেন তারা সেইভাবে সহযোগিতা করছে না। তিনি বলেন, সমপ্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সনাতনী কিছু মানুষ, সবাই না তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। হিন্দু কমিউনিটির ওপর নির্যাতন হচ্ছে ইত্যাদি কথা বলছে- যা সর্বৈব মিথ্যা। এটা তাদের সুদূর পরিকল্পনা- বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমরা বলেছি। এই কথাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বলেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এদিকে বিএনপি’র বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিএনপি নেতারা জানতে চান- পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন এখনো কীভাবে বহাল তবিয়তে আছেন। অবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান তারা।
বৈঠকে গুম-খুনের বিচার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন নেতারা। এছাড়াও গুম, খুনের মাস্টারমাইন্ড ও ঠাণ্ডা মাথার খুনি সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। রিমান্ডের নামে তাকে জামাই আদর করা হচ্ছে বলেও বৈঠকে অভিযোগ করে বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংস্কারে গঠিত কমিশনের দুই সদস্য ইসি’র সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও সাবেক সচিব আব্দুল আলীমের অতীত ভূমিকার কারণে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকীর বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে দলটি। নেতারা জানিয়েছেন, আলী ইমাম মজুমদার ও আহসান কিবরিয়া প্রশাসনে আওয়ামীকরণ করছেন। এছাড়া জনপ্রশাসন সচিব ড. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের আগে তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছে দলটি। ছয় সদস্যের বিএনপি’র প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে বিএনপি’র পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে বসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর প্রফেসর মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, আনম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আব্দুল হালিম, সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ প্রমুখ। সংলাপ শেষে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দু’টি রোডম্যাপ চেয়েছি। দেশবাসীকে জানিয়েছি এবং সরকারকেও জানিয়েছি। একটা রোডম্যাপ হবে সংস্কারের এবং আরেকটা হবে নির্বাচনের। সংস্কারটা সফল হলে নির্বাচনটা সফল হবে। এজন্য দু’টি বিষয়ের উপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। তাদের (সরকার) সঙ্গে আমাদের আরও সংলাপ হবে। খুব অচিরেই তারা প্রকাশ করবেন এবং আমরাও প্রকাশ করবো। এটা খুব দেরি হবে না। আমরা বলেছি, জনগণের কাছে আপনাদের অনেক প্রত্যাশা। এই সময়টা টেনে আমরা লম্বা করবো না। যৌক্তিক সময়টা যাতে আমরা বহাল রাখতে পারি। উনারা কোনো দ্বিমত পোষণ করে নাই। আমরা আশা করি, এখানে কোনো সংকট তৈরি হবে না, ইনশাআল্লাহ। জামায়াত আমীর বলেন, আগামী ৯ই অক্টোবর আপনাদের মাধ্যমে জাতির সামনে আমাদের প্রস্তাবনাগুলো উন্মুক্ত করবো, ইনশাআল্লাহ। এটা প্রাথমিক তথ্য। অবিলম্বে আমাদের চিন্তা জাতির সামনে তুলে ধরবো যে, কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন। কী কী সংস্কার আমাদের পরবর্তীতে লাগবে। তিনি বলেন, দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখানে কথা হয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণ এবং বর্তমান সরকার একসঙ্গে কীভাবে পারিপার্শ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন সাধন করতে পারে এবং সকল ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে- সে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখানে কথাবার্তা হয়েছে। আমরা আশা করছি, বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে, তারা কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে দেশকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবেন। আশা করছি, সময়টা দীর্ঘ হবে না। আমরা শুরু থেকে বলেছি, সংস্কারের জন্য আমরা সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে, সেটা নিয়ে আামরা অচিরেই কাজ করবো- সেটাও আপনাদের সামনে চলে আসবে। তিনি বলেন, এখানে একটা প্রশ্ন এসেছে, আসন্ন দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর রাখার জন্য করণীয় কী? আমরা সেগুলো আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সকলের সহযোগিতায় দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাক, সেই জায়গায় আমরা অবদান রাখতে চাচ্ছি। আমরা আজকে এসেছিলাম দেশ ও জাতির প্রয়োজনে। এই সরকার একটা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকাকে আহ্বান জানিয়েছি।
অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক শেষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সংস্কারের বিষয়ে আমরা মত দিয়েছি। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করবো আমরা। আমরা প্রশাসনের কিছু দুর্বলতা দেখছি, ব্যর্থতা দেখছি, সীমাবদ্ধতা দেখছি। সিভিল পুলিশসহ প্রশাসনে এমন কিছু দেখছি যা উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো। এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন। সংস্কারের একটা শর্তই হচ্ছে সবাই সেটা গ্রহণ করবে। ন্যূনতম ঐক্যের প্রচেষ্টা সরকারকে করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরাসহ সব রাজনৈতিক দল সরকারকে সহযোগিতা করবো। আমরা বলেছি, যতদূর পর্যন্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংস্কার করতে পারবো, ততদূর পর্যন্ত আমরা সংস্কার করবো। বাকি যেসব সংস্কার দরকার, তা পরের নির্বাচিত সরকার এসে করবে। এ ছাড়াও গার্মেন্টস এলাকায় যে অসন্তোষ তৈরি করা হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে সবাই কথা বলেছেন। মান্না ছাড়াও সংলাপে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমম্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন।
এরপর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ সময় তারা আরও ৯টি সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য পেশ করে। দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে অন্যদের মধ্যে ছিলেন দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, প্রেসিডিয়াম প্রফেসর আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম ও সিনিয়র সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ।
সংলাপ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি)। এ সময় দলটি ৬ দফা পর্যবেক্ষণ ও ১১ দফা প্রস্তাবনা পেশ করে। এ ছাড়া দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে এবি পার্টি। পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি।
হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সংলাপ শেষে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে অনেকগুলো কমিশন গঠন হয়েছে। প্রতিটি কমিশন আলাদা আলাদা করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবে, আলোচনার মাধ্যমে তারা তাদের সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। সেই প্রস্তাবনা তৈরি হলে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তারপরেই সকলের মতামত নিয়ে সংস্কার প্রস্তাবনার কাজ শুরু করবে।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি যে শিক্ষা কমিশন বাতিল করা হয়েছে এখন আরও একটি শিক্ষা কমিশন গত ৩০শে সেপ্টেম্বর গঠন করা হয়েছে প্রাথমিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়ে। সেক্ষেত্রে কিছু আপত্তির জায়গা রয়েছে। এই কমিশনে এমন ব্যক্তি রয়েছে যারা বিগত রেজিম সরকারের হয়ে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কথা বলেছি। বাজার মূল্য যাতে নিয়ন্ত্রণে আসে সেই বিষয়ে কথা বলেছি।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মাওলানা শায়খ সাজেদুর রহমান, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা আবদুল বাসেত আজাদ, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজি, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মামুনুল হক, মাও. মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, মাও. আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
উল্লেখ, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে গত ৮ই আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে তিন দফা প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ করেন।
সূত্র:মানবজমিন