নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা।।
একটি মহলের হুমকি ও বাধার মুখে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামে মরমি সাধক ফকির লালন সাঁই স্মরণে ‘সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা’ বন্ধ হয়ে গেছে। পরে আয়োজকরা সংক্ষিপ্ত পরিসরে মেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি।
মেলার আয়োজক কাশীপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও ২২ ও ২৩ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল লালন স্মরণে ভক্তিমূলক গান, লালন সম্পর্কে আলোচনা ও খাবার বিতরণ। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার নিজের জমিতে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে গত ১০ বছর ধরে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালনভক্তরা এই আয়োজনে আসেন এবং লালনের গান চর্চা করেন। এখানে কোনও ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ড হয় না। তবে এবার তৌহিদি জনতার ব্যানারে মেলার কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ডিআইটি মসজিদের খতিব ও হেফাজত নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল। এমনকি মেলা বন্ধ না করলে সবকিছু ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছেন। ফোনে ও নানা লোকের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। হুমকির মুখে মেলার আগতরা সবাই চলে গেছেন। এই অবস্থায় বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রতি বছর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে মেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। তবে এবার হেফাজত নেতার হুমকির পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লালন মেলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
এর আগে, ১৫ নভেম্বর কাশিপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর ঈদগাহ মাঠে ‘তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে এক দল লোক নিয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল লালন মেলা বন্ধের হুমকি দেন। তার সেই হুমকি দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ইস্যু তুলে তারা বাধা দিয়ে আসছে। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় ও অপরাধমূলক কাজ। আর মাওলানা আব্দুল আউয়াল পলাতক গডফাদার শামীম ওসমানের দালাল ছিলেন। তিনি আলোচনায় আসতে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে লালন মেলা বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন।’
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘লালন মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর তৌহিদি জনতার হুমকির বিষয়টি জানা নেই।’