বিপ্লব সিকদার :
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিট আজ রবিবার (০৫ অক্টোবর ২০২৫) চারটি পৃথক স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে। কমিশনের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এসব অভিযানে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ লেনদেন, অনিয়ম ও হয়রানির নানা প্রমাণ মিলেছে।
প্রথম অভিযানে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতাধীন “মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে” প্রায় ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে টিম সংশ্লিষ্ট কার্যালয় পরিদর্শন করে প্রকল্পের আর্থিক রেকর্ড, ভাউচার, অনুমোদনপত্র ও ব্যয়ের হিসাবসহ নানা নথিপত্র সংগ্রহ করে। প্রাথমিক পর্যায়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম, অসদুপায় অবলম্বন এবং সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযান শেষে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় অভিযানে কর অঞ্চল-৫ এ অসাধু যোগসাজশ ও ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে আয়কর রিটার্নে বিধিবহির্ভূতভাবে সম্পদ সংযোজন এবং রাষ্ট্রীয় রাজস্বের ক্ষতি সাধনের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে সাময়িক বরখাস্তকৃত এক সহকারী কর কমিশনারের বিরুদ্ধে ৩৮ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি এই ঘুষের বিনিময়ে আয়করদাতার পুরনো আয়কর রিটার্ন ও অন্যান্য দলিল অবৈধভাবে হস্তান্তর করেছেন বলে জানা যায়। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মেলায় এনফোর্সমেন্ট টিম বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে।
তৃতীয় অভিযানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ ক্রয়ে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ এবং চিকিৎসাসেবায় হয়রানির অভিযোগে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে টিম হাসপাতালের বিভিন্ন রেকর্ডপত্র, স্টক রেজিস্টার, টেন্ডার ও অনুমোদন সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য গ্রহণ করে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও অনুপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশাপাশি রোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবায় অব্যবস্থাপনা, হয়রানি ও সেবার মানহীনতাও লক্ষ্য করা যায়।
চতুর্থ অভিযানে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ দাবিসহ নানাবিধ হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালিত হয়। টিম দলিল দাতা ও গ্রহিতার বক্তব্য গ্রহণ করে এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ড সংগ্রহ করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিধিবহির্ভূতভাবে নকলনবিশের মাধ্যমে দলিল ফেরত দেওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
দুদক জানিয়েছে, এসব অভিযানে সংগৃহীত তথ্য ও প্রমাণাদি যাচাই-বাছাই করে কমিশনের নিকট বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পরবর্তী সময়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।