• বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]
সর্বশেষ
এভারকেয়ারে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন, বিভ্রান্তি এড়াতে আহ্বান মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের মেধাবী সাইমন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাই মেঘনাবাসীর জীবনযাপনে বিপর্যয় খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের মেডিকেল টিম এভারকেয়ারে যোগ দিল হোমনায় এসিল্যান্ডের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে দুই বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু মেঘনায় মেম্বারের খোয়ার থেকে ৫ গরু চুরি! তেজগাঁও কলেজ সাংবাদিক সমিতির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হলেন রাজু আহমেদ কাঠালিয়া নদীতে নৌ পুলিশের অভিযান পাড়ারবন্ধ এলাকা থেকে দুই চাঁদাবাজ আটক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষকরা আবার বিক্ষোভে: বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত

রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাই মেঘনাবাসীর জীবনযাপনে বিপর্যয়

বিপ্লব সিকদার / ৩৮ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

 

মেঘনা উপজেলা নদীবেষ্টিত একটি দুর্গম জনপদ। বছরের পর বছর ধরে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে। কিন্তু প্রকৃত চিত্রটি আরও গভীর: রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্থানীয় ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মিলে পুরো জনপদের জীবনযাপনে নেমে এসেছে এক ধরনের নীরব বিপর্যয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেঘনায় গত এক দশকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু দল -দলান্দলে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সামাজিক পরিবেশেও তৈরি করেছে অস্থিরতা। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনৈতিক গ্রুপিং এতটাই তীব্র যে সাধারণ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয় চিকিৎসা, চলাচল, নিরাপত্তা—এসব নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দলীয় বিবেচনায়। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী সুবিধাভোগী হলেও বৃহৎ জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি দখল থেকে শুরু করে নদীপথে চাঁদাবাজি সব জায়গায় রাজনৈতিক আশ্রয়–প্রশ্রয় একটি অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।

সামাজিক অস্থিরতাও মেঘনায় একটি বড় বাস্তবতা। নদীর ভাঙন ও চর গঠনের কারণে মানুষের পুনর্বাসন, বাসস্থান ও কর্মসংস্থান অনেকটাই অনিশ্চিত। কিন্তু এসব সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। স্কুল–কলেজ থেকে স্বাস্থ্যসেবা, প্রায় সব সেক্টরেই সেবাবঞ্চনা নিত্যদিনের ঘটনা। ফলাফলে তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে; অনেকে কাজের খোঁজে শহরমুখী হচ্ছে, আর যারা থাকছে তাদের অনেকেই স্থানীয় আধিপত্যের প্রভাবে স্বাধীনভাবে চলাচল বা মত প্রকাশ পর্যন্ত করতে পারছে না।

রাজনৈতিক অস্থিরতার বড় উদাহরণ দেখা যায় নৌপথনির্ভর অর্থনীতিতে। নলচর থেকে পারারবন্ধ এলাকা পর্যন্ত নৌযান চলাচল দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজির কবলে। মাঝি–মাল্লারা হামলা ও ভীতি প্রদর্শনের শিকার হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগের সুরাহা হয় না। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া পাওয়ায় এসব চক্রকে ধরাধরি করা হয় না, বরং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

অপরদিকে গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় সাধারণ মানুষ প্রায়ই নির্ভর করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের উপর। কিন্তু সেই নির্ভরশীলতা এখন অনেক সময় শোষণে রূপ নিচ্ছে বালু ব্যবসা, ইজারা, জলমহাল, এমনকি সামাজিক সমাধানব্যবস্থা সব কিছুতেই ‘ক্ষমতার লোকদের’ শেষ কথা। এর ফলে মানুষ ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এবং সমাজে তৈরি হচ্ছে অবিশ্বাসের দেয়াল।

মেঘনাবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতির জায়গা হলো নিরাপত্তাহীনতা। রাতের অন্ধকারে দস্যু ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত, গ্রাম্য কোন্দল, দলীয় রাজনৈতিক বিরোধ—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মনে দীর্ঘদিন ধরে ভয় কাজ করছে। অনেক সময় থানায় অভিযোগ করলেও সঠিক তদন্ত বা বিচার পাওয়া যায় না বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, বিচার না হওয়া বা দোষীদের ধরা না পড়া অস্থিরতাকে আরও ঘনীভূত করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেঘনার সংকট শুধুই অবকাঠামোগত নয়—এটি একটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতারও প্রতিফলন। পরিকল্পিত উন্নয়ন, আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ এবং সামাজিক সংস্কার উদ্যোগ ছাড়া মেঘনার অস্থিরতা দূর হবে না। নদীপথের নিরাপত্তা, ভূমি–বিতর্কের দ্রুত নিষ্পত্তি, রাজনৈতিক সহাবস্থান ও জনসম্পৃক্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম এসব নিশ্চিত না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

মেঘনার মানুষ আজও আশা ধরে রাখে হয়তো একদিন এই জনপদ রাজনৈতিক উত্তাপ, সামাজিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুর্দশার ঘূর্ণাবর্ত থেকে বেরিয়ে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু এ পথটি দীর্ঘ, এবং সেই পথচলায় প্রয়োজন সুশাসন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও একটি নিরাপদ সামাজিক কাঠামো যা তাদের জীবনযাপনের স্থিতি ফিরিয়ে দিতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।

এই জাতীয় আরো খবর দেখুন