ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কুমিল্লা–১ (দাউদকান্দি–মেঘনা) আসনকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে মাঠে নামানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিচারিক কমিটি। অতীত নির্বাচনগুলোতে অনিয়ম, কেন্দ্র দখল, প্রভাব বিস্তার ও সংঘাতের অভিযোগে বারবার আলোচনায় থাকা এই আসনে এবার আগাম বিচারিক হস্তক্ষেপকে ‘কঠোর বার্তা’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম অনুসন্ধান এবং সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন আনিসুল হক , সিভিল জজ, কুমিল্লা । তিনি The Representation of the People Order, 1972-এর Article 91A অনুযায়ী সরাসরি মাঠে থেকে অভিযোগ গ্রহণ, অনুসন্ধান এবং প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
ঝুঁকি ম্যাপিং: কোথায় কী ধরনের শঙ্কা
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নির্বাচন এলেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
উচ্চ ঝুঁকি অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে রয়েছে—প্রভাবশালী রাজনৈতিক বলয়ের আধিপত্য, কেন্দ্রভিত্তিক শক্তি প্রদর্শনের অভিযোগ এবং ভোটারদের ওপর চাপ প্রয়োগের প্রবণতা।
মধ্যম ঝুঁকি অঞ্চলগুলোতে রয়েছে আচরণবিধি লঙ্ঘন, নিষিদ্ধ পোস্টার–ব্যানার, রাতের আঁধারে মিছিল ও বৈঠকের অভিযোগ।
আর নিম্ন ঝুঁকি অঞ্চলগুলো তুলনামূলক শান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে অর্থ ও প্রভাব ব্যবহারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অনিয়মের ধরন ও কৌশল
স্থানীয় সূত্র বলছে, নির্বাচনের সময় এখানে সাধারণত তিন ধরনের অনিয়ম বেশি দেখা যায়
এক. ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো ও প্রভাবিত করার চেষ্টা।
দুই. আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গোপন সভা ও শক্তি প্রদর্শন।
তিন. ভোটের আগের রাত ও ভোটের দিন কেন্দ্রকেন্দ্রিক প্রভাব বিস্তার।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন এই আসনে বিচারিক কমিটির সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
বিচারিক কমিটির কঠোর অবস্থান
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, কোনো রাজনৈতিক পরিচয়, দলীয় প্রভাব বা প্রশাসনিক চাপ বিবেচনায় নেওয়া হবে না। অনিয়মের প্রমাণ মিললে তাৎক্ষণিকভাবে সংক্ষিপ্ত বিচার শেষে শাস্তি কার্যকর করা হবে। প্রয়োজনে একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দাউদকান্দি–মেঘনায় বিচারিক কমিটির সরাসরি মাঠপর্যায়ের তৎপরতা নির্বাচনী সহিংসতা ও অনিয়ম কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত এই কঠোর অবস্থান কতটা বাস্তবায়িত হয়, সেটিই এখন এলাকার ভোটারদের প্রধান প্রশ্ন।