• শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩০ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

মেঘনায় প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা

বিপ্লব সিকদার / ১০১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

 

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় কতিপয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে একের পর এক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার চিত্র উঠে এসেছে, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাওরখোলা ইউনিয়নের গাছতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ ওঠায় তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে অভিযোগের প্রকৃত তদন্ত বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো নজির নেই। অপরদিকে খিরাচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সদ্য সমাপ্ত বার্ষিক পরীক্ষায় গণিত বিষয়ের পরীক্ষাকালে এক সহকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সরাসরি প্রশ্নের উত্তর বলে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া মেঘনার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষা অফিস থেকে সরবরাহ করা প্রশ্নপত্র বাতিল করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা গ্রহণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি সরকারি পরীক্ষানীতির সরাসরি লঙ্ঘন হলেও এ নিয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, প্রশ্ন ফাঁস ও প্রশ্ন পরিবর্তনের সঙ্গে বিদ্যালয়ভিত্তিক কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর স্বার্থ জড়িত। একাধিক সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীরা ভালো ফল না করলে অভিভাবকরা প্রাইভেট পড়াতে আগ্রহ হারান—এই আশঙ্কা থেকেই কিছু শিক্ষক পরীক্ষায় অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকেন।

সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষকদের সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সখ্যতা। শিক্ষকদের মধ্যেও একাধিক গ্রুপিং সক্রিয় থাকায় কেউই কারও বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। সবকিছু জেনেও শিক্ষা অফিস কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অধিকাংশ শিক্ষক স্থানীয় হওয়ায় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্বে তাদের ভূমিকার কারণেও অনেকেই সুবিধা পাওয়ার আশায় নীরব থাকেন। ফলে কতিপয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা অফিসও কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে।

অভিভাবকরা বলছেন, স্কুল, প্রাইভেট ও কোচিং—সব জায়গায় পড়ানোর পরও যদি পরীক্ষার হলে শিক্ষকরা উত্তর বলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেন, তাহলে প্রকৃত শিক্ষার লাভ কোথায়? অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রাথমিক স্তরে দুর্বল ভিত্তির কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী পরবর্তীতে অষ্টম শ্রেণি পাস করতে ব্যর্থ হয় এবং ঝরে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যেখানে শিক্ষকদের নীতি ও নৈতিকতাই প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার আশা করাই বোকামি।”

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, “খিরাচক স্কুলের বিষয়টি আমি জানি না। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের সময় যেসব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি, সেখানে নিজস্ব প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।” তবে অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মেঘনায় কোনো আন্দোলন হয়নি।”

সচেতন মহলের মতে, মেঘনায় প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা সবার জানা থাকলেও একটি শক্ত সিন্ডিকেট, অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও নির্বাচনী প্রভাবের কারণে অনিয়মগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। শিক্ষা অফিস ও একাংশ শিক্ষক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পথে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নড়বড়ে এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে টেকসই ও কার্যকর করতে হলে দাপ্তরিকভাবে দায়িত্বশীলদের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং নিরপেক্ষ তদন্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।

এই জাতীয় আরো খবর দেখুন