সম্প্রতি ইসলাম ও মহানবী(সা:) কে নিয়ে কটুক্তি করার দায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের জয় দেব নামের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ফেইসবুক একাউন্ট ব্যাবহার করে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের অভিযোগ এনে তাকে মানষিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্পীতি নষ্ট করতে একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন উসকানিমূলক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা। এদিকে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে সোমবার বিকেলে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করছেন বলে জানান ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী।
জান যায়, রবিবার রাতে শ্যামল চন্দ্র দাস নামের একটি ভুয়া ফেইসবুক একাউন্ট থেকে মঈনুল ইসলাম আবির নামের অন্য একটি একাউন্ট থেকে করা ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যটি নিজের ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মঈনুলের নামে চালিয়ে দেন।
পরে রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের বায়েজিদ ইসলাম গল্প নামে এক শিক্ষার্থী কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি নামক গ্রুপে নিজের আইডি থেকে ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের কয়েকটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। পরে এটি ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এবং তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে রাতভর ঐ শিক্ষার্থীকে মানষিকভাবে বিপর্যস্ত করতে দেখা যায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম আবির এমনটি করেননি বলে জানিয়ে ওই গ্রুপে একটি স্ট্যাটাস দেন। পরবর্তীতে গল্প তার নিজের স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেন এবং মঈনুলসহ সকলের কাছে এমন কাজের জন্য ক্ষমা চান।
কিন্তু শ্যামলের একাউন্ট ঘুরে দেখা যায় তার মেইল একাউন্টটি মইনুল ইসলাম আবিরের নামে খোলা। যা দেখে সকলের সন্দেহের তীর যায় শ্যামল নমক একাউন্টির দিকে। যা এখনও ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের এবং ভুক্তভুগীর অভিযোগ, উদ্যেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিশ^বিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনার জের ধরে রোববার মধ্যরাতে মইনুলের বাসায় একদল যুবক তাকে খুজতে যায় এবং তার রুম তল্লাশি করেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগী এ শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মঈনুল বলেন, ‘এটা পুরোটাই একটা সাজানো নাটক ছিল। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে মারতে পর্যন্ত গিয়েছে তবে আমি সেখানে ছিলাম না বলে বেচে যাই। আর যারা আমারা বিরুদ্ধে এমন মিথ্যাচার করেছে এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নষ্ট করার চেষ্টা করেছে আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।’
এদিকে সোমবার সকালে শ্যামল চন্দ্রের ওই আইডি থেকে ফের মঈনুলের নামে আঞ্চলিক সংগঠনের অজুহাতে রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রশ্ন তুলে পুনরায় বিতর্কের সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তবে আবির জানান, সে তার এলাকায় ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত আছেন এবং তার পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এবং তিনি সব সময় অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার জন্য একটি চক্র এমন কাজ করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অমিত মেহদি বলেন, ‘তারা কালপ্রিট নয়। তারা আমাদের হৃদয়টাকে ভাগ করে দিয়েছে। এটা সারাতে অনেক সময় লাগবে।’
রাজিব চক্রবর্তী রূপক নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট হোক এটা আমি কখনোই চাই না। গল্পের পোস্টটা দেখে আমি পোস্টটা করেছিলাম। অপরাধী শনাক্ত হোক, তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ জানান, ‘আমরা সকলে সারারাত জেগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের হুঁশ এখনও আসেনি। তারা এখনও এটার সত্যতা যাচাইয়েরও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যদি এটা নিয়ে বড় কোন ঘটনা ঘটে যেত তাহলে এটা প্রশাসনেরই গাফিলতি ফল হত। আর আমরা সার্বিক বিষয়ের সত্যতা বের করে বিচারে দাবি করছি।’
জিডির বিষয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, ‘ঐ শিক্ষার্থী জিডি করছেন। আর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত টিম কাজ করছে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিৎ ছিলনা এমন প্রশ্নে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কাল রাত থেকে বিষয়টির সার্বিক পরিস্থিতি তত্ত্বাবধান করছি। আর পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে ওই আইডিগুলো শনাক্ত করে অপরাধীদের বিচারে আওতায় আনার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।