১৯ জুন, ২০১৯,বিন্দুবাংলা টিভি. কম,
ডেস্ক রিপোর্ট ‘: নিজের দেশে ফিরে শুনি, আমি নাকি রোহিঙ্গা। ছয় বছর আগে পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গেছি। আমরা প্রবাসীরা বিদেশেও দাম পাই না, দেশেও দাম পাই না।
অসুস্থ, তারপরও মাফ নেই। ঢাকা এয়ারপোর্টে ১৩ ঘণ্টা আটকা থাকার পর ছাড়া পাইছি। লেবাননে এমবাসি আর এইখানে পুলিশের কাছে হয়রানি হইতে হইছে।
কথাগুলো বলছিলেন লেবানন থেকে প্রায় ছয় বছর পর দেশে ফেরা ফরিদপুরের হাসি বেগম। অসুস্থ হয়ে পড়ায় লেবাননে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। ব্যয় সামলাতে না পেরে অসহায় হয়ে দেশে ফিরেছেন।
গত শনিবার সকাল নয়টায় ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালেও জিজ্ঞাসাবাদের পর বের হতে লেগে যায় ১২ ঘণ্টার বেশি।
অস্ত্রোপচারের স্থানে অসহ্য ব্যথা নিয়ে কাতরালে বিমানবন্দরে চিকিৎসক ডেকে আনে পুলিশ। তাঁকে ব্যথার ওষুধও দেন চিকিৎসক। আর বিমানবন্দরের সামনে তাঁর বাবা হানিফ খালাসীর অপেক্ষার সময় প্রায় ১৮ ঘণ্টা।
শিল্পী আক্তার প্রায় ১০ বছর পর লেবানন থেকে ফিরেছেন। লেবানন থেকে দুবাই হয়ে লম্বা ভ্রমণ শেষে ঢাকায় বিমানবন্দরে আটকে ছিলেন প্রায় ১৫ ঘণ্টা।
নাগরিকত্ব শনাক্ত করতে গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ফোনে নিশ্চয়তা নেওয়া হয়। এ জন্য থানার পুলিশকে শিল্পীর পরিবার পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিছুদিন ধরে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে এটি নিয়মিত ঘটনা। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন প্রবাসী ফিরছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ, যাচাই-বাছাইয়ের পরই ছাড়ছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
অপেক্ষার সময় খাবার সরবরাহ করা হলেও ভ্রমণক্লান্তি আর নানা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন প্রবাসীরা। যাঁরা দেশের পাসপোর্ট নিয়ে আসেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝামেলা কম হলেও বেশি সমস্যায় পড়ছেন যাঁরা ট্রাভেল পাস (ভ্রমণের অনুমতিপত্র) নিয়ে আসছেন, তাঁরা। যাঁদের বৈধ পাসপোর্ট নেই, তাঁদের দেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস দেয় দূতাবাস।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব রৌনক জাহান বলেন, প্রবাসী সব ধরনের হয়রানি বন্ধে তাঁদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। কিন্তু ট্রাভেল পাস এবং নিরাপত্তা তল্লাশির বিষয়টি পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করে থাকে, তাঁদের কিছু করার নেই।
গত ১৬ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের বহিরাগমন শাখা থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো যেন কাউকে ট্রাভেল পারমিট না দেয়।
অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরাতে অনেকেই দ্রুত ট্রাভেল পাস চায়। তাই শ্রমিক হিসেবে যাতে জঙ্গিদের কেউ ট্রাভেল পাস নিয়ে চলে আসতে না পারে, সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তবেই ট্রাভেল পাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থেই যাচাই করতে হয়, কিন্তু কাউকে হয়রানি করার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।
দেশে ফেরা প্রবাসীরা বলছেন, যাচাই-বাছাই করেই দূতাবাস তাঁদের ট্রাভেল পাস দিয়েছে। এটা নিয়ে ফেরার সময় বিদেশের বিমানবন্দরে কোনো অসুবিধা হয়নি। নিজ দেশের বিমানবন্দরে এসে যত ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। দ্রুত যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তাঁদের বিমানবন্দর ত্যাগের অনুমতি দেওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।