২৯ জুলাই ২০১৯,বিন্দুবাংলা টিভি.কম, বিশেষ প্রতিনিধি : বাবার সাথে তাল মিলিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিলো যে ছেলেটির পরিবারের দায়িত্বের পাশাপাশি মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে আসা সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার আজ কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা পরিষদের উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। সম্প্রতি বিন্দুবাংলা টিভি একান্ত সাক্ষাৎকারে তার বর্নাঢ্য জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে এনেছেন। সাইফুল্লাহ মিয়া রতন সিকদার, কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলা র লুটের চর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি প্রয়াত মান্নান শিকদার ও প্রয়াত শরিফুন্নেছার সংসারে ১৯ ৬ ০ সালের ১ লা জানুয়ারি পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেন। রতন শিকদার ৭ ভাই, ৩ বোনের মধ্যে সবার বড়। নাঃ গঞ্জের তুলারাম কলেজ থেকে ডিগ্রি করে মেধা ও শিক্ষায় মনোনিবেশকারী ছাত্র হওয়া সত্বেও পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে ছোট ভাইদের মানুষ করার চিন্তা মাথায় রেখে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের ইচ্ছা কে ত্যাগ করে প্রবাসে পাড়ি জমান। প্রবাস জীবন দেড় বছর পার হওয়ার পরেই বাবা চলে যান পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে। এর পরই পরিবারের পুরো দায়িত্ব চলে আসে রতন শিকদারের উপর। এত বড় সংসারের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজের প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিশনটাই তার ভবিষ্যতের মুল চাবিকাঠি। প্রবাসে ভালো চাকুরির সুবাদে তিনি আস্তে আস্তে ছোট ভাই কে প্রবাসে নেওয়া ও লেখা পড়ার সুযোগ করে দিলে সবাই শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সবাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। শিকদার পরিবার হয়ে উঠেন আলোকিত পরিবার। রতন শিকদার ১৯৮১ সালে তুলারাম কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগ থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। তখন থেকেই রাজনীতির হাতে খরি এবং হাজারো কষ্টের মাঝেও মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছাটা কখনো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেননি। ১৯ ৮৮ সালের বন্যায় প্রবাস থেকে তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে অনেক ত্রান সামগ্রী বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করেন। তিনি ১৯৯০ সালে সংসার জীবন শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফফার সহ আরও বন্ধুদের নিয়ে গোবিন্দপুর ইউনিয়ন থেকে ভাগ করে লুটের ইউনিয়ন পরিষদ বাস্তবায়ন করেন তিনি বলেন মরহুম আ: হাকিম চেয়ারম্যান তখন আমাদের অনেক সহযোগিতা করেন এবং খুল অল্প সময়ের মধ্যে আমরা লুটের চর ইউনিয়ন বাস্তবায়ন করতে পারি। আমার কিছু প্রভাবশালী বন্ধুরা ছিলো যাদের সাথে তুমুল প্রতিযোগিতা করে আমি ১৯ ৯২ সালে লুটের চর ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ১৯ ৯৬ সালে যদিও আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় ছিলো কিন্তু আজকের মেঘনা উপজেলায় এমপি ছিলেন ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন আর প্রয়াত এম কে আনোয়ার। এই ভূখণ্ড কে উপজেলা করার জন্যে শফিক ভাই আমাদের মত চেয়ারম্যান দের সাথে প্রথম আলোচনা করে আমরা তখন ভাবলাম এটা একটা বিরাট কাজ তবে শফিক ভাইয়ের কথার উপর আমাদের আস্তা আসে তখন আমরা বড়কান্দা ইউনিয়নের তৎকালীন সময়ের চেয়ারম্যান ফজলুল হক সাহেব সহ কাজ করি এবং প্রথম দাউদকান্দি উপজেলায় সমন্বয় মিটিংয়ে একটি রেজুলেশন করা হয়। শফিক ভাই আমাদের সবাইকে নিয়ে প্রয়াত স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর বাসায় নিয়ে যায় এবং ফজলুল হক চেয়ারম্যান তিনি মুরুব্বি ও শফিক ভাইয়ের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনিই স্পীকার সাহেবের সামনে উত্থাপন করলে স্পীকার সাহেব বললেন চেয়ারম্যান সাহেব আমি সব শফিকের কাছ থেকে শুনেছি ইনশাআল্লাহ আপনাদের দাবি বাস্তবায়ন হবে। রতন শিকদার বললেন সে দিন থেকে আশ্বস্ত হলাম যে না এটা শফিক ভাই এই চরাঞ্চলীয় জনতার পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি করতে পারবে। সেখান থেকে উনার উপর আস্তা বেরে যায় এবং মেঘনা উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদ হয় আমাকে শফিক ভাই সদস্য সচিব নির্বাচন করেন। আমি আমার সর্বোচ্চ টা দিয়ে সততার সাথে চেষ্টা করেছি উনার সঙ্গে কাজ করার জন্য। যেহেতু আমাদের এলাকার দুই জন এম পি বিএনপির ছিলো তাই সংসদে উত্থাপন করতে পিটিশন কমিটিতে দরখাস্ত করা হয় । আমরা রামপুর বাজারে একটি সভা করি সেখানে প্রয়াত স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী কে আনি আপামর জনতার দাবী ছিলো থানা চাই, থানা চাই, এই শ্লোগানে মুখরিত ছিলো ময়দান। তখন মরহুম আঃ মজিদ,প্রয়াত আ: হাকিম চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফফার, সহ জুনিয়ররা অনেকেই ছিলো অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।
রতন শিকদার বলেন একনেকের ৮৩ তম সভায় উত্থাপিত হয় ও ১৯৯৮ সালের ২৬ আগষ্ট একনেকের ৮৪ তম সভায় আমাদের মেঘনা উপজেলা সহ ধুমকী ও মুজিবনগর উপজেলা পাস হয়। কোন কিছুই সহজে হয়নি অনেক অসমতল পথে হেটে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ই করতে হয়েছে। দুঃখ জনক হলেও বলতে হয় উপজেলা হওয়ার পর আমরা স্পীকার সাহেব কে আনার সকল প্রস্তুতি নিয়েও একটি কুচক্রী মহলের কারনে আমরা উনাকে আনতে পারিনি এমনকি প্রশাসনিক অস্থায়ী কার্যক্রম রামপুর বাজারে করার প্রস্তুতি ছিলো আমাদের কিন্তু সেই কুচক্রী মহলের কারনে আমরা তা পারিনি সেটাকে মানিকার চর বাজারে করা হয় সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আমরা দাওয়াত ও পাইনি। রতন শিকদার আর ও বলেন উপজেলা হওয়ার পর আওয়ামীলীগের কমিটি হয় যেখানে ডা:খোরশেদ আলম আহবায়ক ও আঃ সালাম সদস্য সচিব হয় সেই কমিটি দীর্ঘদিন পার করে মাঝখানে প্রয়াত দুধ মিয়াকে যুগ্ম করেও দুজন আহবায়ক হয়। শফিক ভাই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, এবং শফিক ভাই সভাপতি ও খোরশেদ সাহেব কে সাধারণ সম্পাদক করে একটি আওয়ামীলীগের কমিটি দেওয়া হয় যা ৫ মাস পর ভেঙ্গে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হয় সেই কমিটিতে শফিক ভাই সভাপতি আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই এটা ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বরে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে এই রাজনীতি করতে এসে কোন বাধা বিপত্তি আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাকে আমার পরিবার সব সময় উৎসাহ উদ্দিপণা ও সহযোগিতা করেছে আমার ছোট ভাই লুটের চর ইউপি চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ শিকদার,বিগ্রেডিয়ার আমিরুল ইসলাম সহ সাত ভাই সবাই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যে করি। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী দিনে মেঘনার জনগণের জন্য কি কি পরিকল্পনা আপনার আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি আমার দলের নির্দেশনা মেনে সিনিয়রদের সম্মান করে সকল পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি আধুনিক উপজেলা হিসেবে গড়তে যা লাগে আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবো, আমি তরুণ প্রজন্ম কে সামাজিক মুল্যেবোধ তৈরি করতে তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে কাজে লাগাবো এর জন্যে সবাইকে ছাড় দেওয়ার মানুষিকতা নিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। আমি মেঘনা বাসীকে সম্মান করি। রতন শিকদার দুটি পুত্র সন্তানের জনক, ফরহাদুল্লাহ শিকদারও অপূর্ব শিকদার। তিনি সকলের সু স্বাস্থ্য কামনা করেন এবং সহযোগিতা ও দোয়া চেয়েছেন।