২৯ আগস্ট ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, আবু বক্কর সিদ্দিক ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি সরকারী কলেজের গলার কাটা
বিজ্ঞান ভবন ও অধ্যক্ষের বাসভবন
ব্যবহারের অনুপযোগী ও ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় ঝালকাঠি সরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে অধ্যক্ষের বাসভবন এবং বিজ্ঞান ভবন। এনিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরে বারবার চিঠি দিলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা। অথচ বাসভবন বাবদ অধ্যক্ষের বেতন থেকে প্রতিমাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ কেটে নেয়া হচ্ছে। এদিকে ২০ বছর পূর্বে নির্মিত কলেজের দুটি বিজ্ঞান ভবন ঝুকিপুর্ণ হওয়ায় একটি ব্যবহার অনেক আগ থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে। অপরটিতে ঝুকি আতঙ্ক নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কলেজ সূত্রে জানাগেছে, সুগন্ধা নদীর তীরে ১৯৬৪ সালে জমিদারের পুরানো পরিত্যক্ত ভবনে ঝালকাঠি কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডা. এ জামানসহ কয়েকজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন। সুগন্ধার ভাঙনের ফলে ১৯৭২ সালে কলেজটি স্থানান্তর করে তৎকালীন শহরের উত্তর দিকে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদকাঠিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৩.৫ একর জমিতে কলেজ ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হয়। ১৯৮০ সালের ১ মার্চ কলেজটি জাতীয়করণ হয়ে ঝালকাঠি সরকারী কলেজ নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮১ সালে জমিদারের পুরানো ভবন ছেড়ে নতুন ক্যাম্পাসে শিখন-শিখনীয় কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কলেজটি ২০.৪৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত আছে। ১৯৯৩ সালে কলেজ অধ্যক্ষের বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয় ডরমিটরি। ১৯৯৬ সালে কলেজের প্রশাসনিক মূল ভবনের উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয় দ্বিতল বিজ্ঞান ভবন ও দ্বিতল একাডেমীক ভবন।
১৯৯৩ সালে কলেজ অধ্যক্ষের জন্য নির্মিত ডরমিটরি ভবনের কক্ষগুলো অত্যন্ত সরু এবং পাশের চলাচলের রাস্তার চেয়ে নিচু হওয়ায় তা শুরু থেকেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এক অধ্যক্ষ (প্রফেসর রুস্তম আলী) ২ বছর ছিলেন তবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে সংস্কার করা না হলে বাড়ি ভাড়া কাটতে পারবে না বলে তিনি চিঠি দিয়েছিলেন। একারণে ওই অধ্যক্ষের কাছ থেকে ডরমিটরিতে বসবাসের জন্য বাড়ি ভাড়া কর্তন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রত্যেক অধ্যক্ষের বেতন থেকে ডরমিটরি ভাড়া বাবদ মোটা অংকের টাকা কেটে নেয়া হয়। অধ্যক্ষের বাসভবন ব্যবহারের এতোটাই অনুপযোগী যে, নির্মাণের পর থেকে সঠিকভাবে কোন অধ্যক্ষই ওই ডরমিটরিতে বসবাস করতে পারেনি। বর্তমানে ওই ডরমিটরি ভবনের ফ্লোর নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলে বা পানি বৃদ্ধি পেলে ফ্লোর তলিয়ে যায়। ভবনের পাশেই পুকুর থাকায় অনেক সময় সাপের উপদ্রবও দেখা যায় ভবনটিতে। সেখানে অনুপযোগী পরিবেশের কারণে কোন কর্মচারীও থাকতে না চাওয়ায় অব্যবহৃত এবং পরিত্যক্ত অবস্থায়ই রয়েছে। কিন্তু কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আনছার উদ্দিনের মাসিক বেতন থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা ডরমিটরি ভাড়া বাবাদ কেটে নেয়া হচ্ছে। এব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে একাধিক চিঠি দেয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর।
১৯৯৬ সালে দ্বিতল একাডেমীক ভবন নির্মাণের ২০ বছর পরেই তার আস্তর খসে পড়তে থাকে। মরিচাধরা রড বের হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঝুকি নিয়ে পাঠদান ও পাঠ গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একপর্যায়ে জীবনহানির শঙ্কা দেখা দিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভনটিতে সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। একই সময় নির্মিত বিজ্ঞান ভবনও বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হলেও আস্তর আবার খসে খসে পড়তে শুরু করেছে। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের পিছনে পুকুর থাকায় ভবনটি কিছুটা পিছনের দিকে হেলে পড়ছে। এমতাবস্থায় ঝুকি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাঠদান ও পাঠ গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ছাদ থেকে পানি চুষে চুষে নীচে পরে কলেজের আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও মূল্যবান কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আনছার উদ্দিন জানান, একই সময়ে দ্বিতল বিজ্ঞান ও দ্বিতল একাডেমীক ভবন নির্মান করা হলেও একাডেমীক ভবন অনেক আগেই ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান ভবনের অবস্থাও বর্তমানে অনেক নাজুক। সেখানে ঝুকি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাঠদান ও পাঠ গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে অধ্যক্ষ ডরমিটরি ভবন এবং একাডেমীক ও বিজ্ঞান ভবন সম্পর্কে অবহিত করা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, অনার্স কোর্স চালু আছে এমন কলেজ অধ্যক্ষের জন্য ২২শ স্কয়ার ফুট মাপে ডুপ্লেক্স দ্বিতল ভবন করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঝালকাঠি সরকারী কলেজ অধ্যক্ষের জন্য নির্মিত ডরমিটরি ভবনটি ১১শ স্কয়ার ফুটেরও কম। পারিপার্শিক অবস্থার কারণে ডরমিটরি ভবনটি ব্যবহারের সম্পুর্ণ অনুপযোগী বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।