৯ নভেম্বর ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :
আবহাওয়ার সকল পূর্বাভাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রীতিমত বেপরোয়া আঘাত হানতে শুরু করেছে সুপার সাইক্লোন ‘বুলবুল’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষ্যা-অন্ধ্র ঘেঁষে সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দিকে বাঁক নিয়েছে অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সেই সঙ্গে তার আকার এবং গতিও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য মতে জানা গেছে শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। পরবর্তীতে তা সন্ধ্যা নাগাদ বেড়ে ঘন্টায় ১১৫ কিমি বেগে বাংলাদেশের দুবলার চর এলাকায় আঘাত হেনেছে। দুবলার চর ফিশার মেন গ্রুপের হিসাব রক্ষক ফরিদ আহমেদ জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে সিডর এভাবেই প্রথমে আঘাত হানে এবং বিকাল থেকে তা প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে দুবলার চরের জেলে পল্লীগুলো তছনছ করে দেয়।
আঞ্চলিক ঝড়ের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ১১০-১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয় সে ঝড়কে উপমহাদেশীয় অঞ্চলে সাইক্লোন নাম দেয়া হয়। আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে এ ঝড়কে ‘হারিকেন’ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ‘টাইফুন’ বলা হয়। তবে এর গতিবেগ ১২০-১২৫ কিমি হলে সেটিকে সুপার সাইক্লোন হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতেই তা আঘাত হানবে স্থলভাগে। আশঙ্কা বাড়ছে,বুলুবুল কোথায় গিয়ে আছড়ে পড়বে তা নিয়ে। আজ রাতে কি তবে সাগরদ্বীপে ছোবল মারতে চলেছে বুলুবুল? না কি আরও সরে গিয়ে আছড়াবে খেপুপাড়ার কাছে? এখনও নিশ্চিত ভাবে কিছু বলছেন না আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। সাগরদ্বীপ থেকে খেপুপাড়ার মধ্যে তার বিস্তার থাকলেও দিল্লির মৌসম ভবন কিন্তু জানাচ্ছে, বুলবুল আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে এ রাজ্যের সুন্দরবন এলাকায়। আনন্দবাজার
শনিবার দুপুর দুটো নাগাদ ওড়িষ্যার পারাদ্বীপ থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে তা ক্রমশই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগোচ্ছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের অনুমান, শনিবার রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে সাগরদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান বিভাগের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘুর্ণিঝড় অনেকটা জায়গা জুড়ে আঘাত হানে। বুলবুলও অনেকটা জায়গা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে। এখনও পর্যন্ত যা গতি প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সুন্দরবন এবং তার আশপাশেই বুলবুলের আছড়ে পড়বে।
এরইমধ্যেই দিঘা এবং সাগরদ্বীপের অনেক কাছে চলেছে বুলবুল। দুপুর দুটোর সময় ওই দুই জায়গা থেকে বুলবুল মাত্র ৯৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর। কলকাতা থেকে তার দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকেও বুলবুলের দূরত্বও কমে হয়েছে ৪৮৫ কিলোমিটার। বুলবুল আরও কাছে চলে আসায় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগও ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সমুদ্রে বুলবুলের গতিবেগ বেশি থাকলেও, স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় তার গতি কমবে। কিন্তু যে ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বুলবুল, তাতে মনে করা হয়েছে স্থলভাগে আছড়ে পড়লেও, গতি হবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। শেষ মুহূর্তে যদি শক্তি বৃদ্ধি পায়, তা হলে এটি ১৩৫ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিতেও পৌঁছে যেতে পারে।
বুলবুলের এই গতি পথে পড়ছে সাগরদ্বীপ, বকখালিসহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। হাওয়ার গতি ১২০ কিলোমিটারের আশেপাশে থাকতে পারে। সে কারণে ওই সব এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। তবে ঠিক কোথায় আঘাত আনবে বুলবুল, এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতের অধিকর্তা গণেশ কুমার দাস বলেন, “বুলবুল স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় গতি ঘণ্টায় ১৩০-১৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকবে। রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে কোথাও আছড়ে পড়তে পারে সে। ঘূর্ণিঝড়ের একটা বড় ঝাপটা লাগবে এ রাজ্যের সুন্দরবনে।
সূত্র: আনন্দবাজার
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।