১৮ নভেম্বর ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :
যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সংশোধন আসছে, ফলে বদলে যাচ্ছে সংগঠনের ঢাকা মহানগরের (উত্তর ও দক্ষিণ) সাংগঠনিক মানচিত্র। যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, এবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রণীত ঢাকার দুই সিটির গেজেট অনুসারেই করা হচ্ছে যুবলীগের সাংগঠনিক মানচিত্র। যুবলীগ সূত্র জানিয়েছে, যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সভাপতির একচ্ছত্র ক্ষমতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতার ক্ষেত্রে যেন ভারসাম্য থাকে। তবে যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রয়েছে বলেই মনে করেন সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় যুবলীগ। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৬টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির সর্বশেষ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। আগামী রোববার (২৩ নভেম্বর) সংগঠনের ৭ম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, আগে নির্বাচন কমিশনের সীমানা অনুসারে সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সীমানায় কয়েকটি ওয়ার্ড ঠিক ছিল না। কিন্তু এবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গেজেটে দেয়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সীমানা অনুসারে যুবলীগের সাংগঠনিক সীমানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। সেই হিসাবে হাজারীবাগ থানার কিছু অংশ উত্তরে ছিল, কিন্তু তাকে দক্ষিণে নিয়ে আসা হচ্ছে। রামপুরা থানার অংশ দক্ষিণে থাকলেও এবার তা উত্তরে চলে যাচ্ছে।
যুবলীগ সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনের নির্ধারিত বয়সসীমা ‘৫৫ বছরথ গঠনতন্ত্রে নিয়ে আসা হবে। দলীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়টি আসন্ন জাতীয় সম্মেলনেই চূড়ান্ত করা হবে। যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বয়সসীমা ৫৫ বছর বেঁধে দেয়া হয়। যা চলতি মাসে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে উত্থাপন করা হবে। এর আগে যুবলীগের গঠনতন্ত্রে বয়সসীমার বিষয়টি ছিল না।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের অব্যাহতি পাওয়া চেয়ারম্যান সংগঠনে অধিক ক্ষমতার প্রয়োগ করেছিলেন- এ অভিযোগের প্রেক্ষিতেই সংগঠনের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতায় ভারসাম্য যেন ঠিক থাকে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, চলমান ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ বেশ দুর্নাম কুড়িয়েছে। যা থেকে সংগঠনটিকে সুনামে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। যার জন্য যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে নেতৃত্ব বাছাইয়ে কড়াকড়ি আনা হয়েছে, ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের সঙ্গে সংগঠনে দুর্দিনের নেতাদের নেতৃত্বে আসার মধ্য দিয়েই যুবলীগকে আবার সুনামে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে যুবলীগের গঠনতন্ত্রও ভালভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তা যেন সংশোধন করা যায়।
তবে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান শহীদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী কমিটির প্রত্যেকের মধ্যে ক্ষমতার সুন্দর একটি ভারসাম্য তৈরি করা আছে। কোথাও কাউকে অ্যাবসল্যুট (অবাধ ক্ষমতা দেয়া নেই। আমি মনে করি, যতগুলো সহযোগী সংগঠন রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে স্বচ্ছ ও সুন্দর গঠনতন্ত্র হল যুবলীগের।
উল্লেখ্য, রোববার (১৭ নভেম্বর) বিকালে নয়াপল্টন, সিটি হার্ট, ৫ম তলার হলরুমে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান শহীদ সভাপতিত্ব করেন।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের গঠনতন্ত্র সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী কমিটির প্রত্যেকের মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখা আছে। কিন্তু সংগঠনের অব্যাহতি পাওয়া চেয়ারম্যান আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরী কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতার একক ব্যবহার করেছিলেন। ক্ষমতার এমন একক প্রয়োগের কারণেই সংগঠনের গঠনতন্ত্রের প্রতিটি লাইন খুঁজে দেখা হয়েছে।
যুবলীগের ভেতরেই অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ৭ বছর সংগঠন এককভাবে চালিয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। যুবলীগে তার কথাই ছিল শেষ কথা। তার ইচ্ছায় চলত সংগঠনটির কার্যক্রম। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল, সব জায়গায় গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে যুবলীগের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন ওমর ফারুক। কার্যনির্বাহী বা সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকও হতো তার খেয়ালখুশি মতো।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী যুবলীগে চেয়ারম্যানই একক ক্ষমতার অধিকারী এমন দাবি করে আসছিলেন সংগঠনের নেতারা। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কারণেই ওমর ফারুক চৌধুরী আরও বেশি স্বৈরাচারী আচরণ করেতে পেরেছিলেন বলে যুবলীগ নেতারা মনে করেন। গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানকে অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়া আছে বলেও মনে করেন যুবলীগ নেতারা। এ জন্য আসন্ন জাতীয় কংগ্রেসে যুবলীগের গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্যের দাবি আরও আগেই উঠেছিল।
যুবলীগের গঠনতন্ত্রের সাধারণ সম্পাদকের অনুচ্ছেদে বলা আছে, চেয়ারম্যানের পরামর্শক্রমে তিনি কার্যনির্বাহী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সভাপতিমণ্ডলীর সভার আহ্বান করবেন এবং স্বীয় দায়িত্ব পালনে চেয়ারম্যানের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
তবে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহবায়ক ও যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান শহীদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, সংগঠনে সভাপতিকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া নেই। সর্বোচ্চ দেখা গেছে, যে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে অথবা কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে যে কোনো কাজ করবেন। সভাপতি সকল কাজই সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে করবেন। কিন্তু ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে গিয়ে দেখা গেছে, সভাপতি একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। সাধারণ সম্পাদক তার যে দায়িত্বটা ছিল- কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে ভাগাভাগি করা অথবা সভাপতি যদি কোনো অনিয়ম করে সেখানে প্রতিবাদ করা, সেটা করেননি। এটা হলো দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা।
যুবলীগের গঠনতন্ত্রে ২৫ এর (চ) ধারায় বলা আছে, সংগঠনের একই স্তরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে কোনো পদে ২ বার অথবা উভয় পদে ১ বার করে মোট ২ বার দায়িত্ব পালনের পর কোনো ব্যক্তি ৩য় মেয়াদের জন্য ঐ স্তরের কোনো পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে ২ বার দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিকে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সংগঠনের চেয়ারম্যান বিশেষ বিবেচনায় তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি প্রদান করতে পারেন।
তবে যুবলীগ সূত্র জানিয়েছে, এটা এবার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষমতা সংগঠনের সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদককে অংশীদার করা হচ্ছে।
সূত্র : দৈনিক জাগরণ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।