৫ এপ্রিল ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম,
রাব্বি হাসানঃ প্রবাসি মানেই হাড়ভাঙা পরিশ্রমী একদল খেটে খাওয়া মানুষ। প্রবাস মানেই কি নিঃসঙ্গতা? একাকিত্ব? নাকি প্রবাস মানেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম। কেমন কাটে প্রবাসজীবন? কেউ বলে মলিন নয়তো ফ্যাকাশে। কেউ বলে পানসে। কারও কাছে রোমাঞ্চকর, অতিমাত্রায় স্বাধীনতা। কারও কাছে জীবনের সোনালি অধ্যায়ের যাত্রা শুরু। কেউ ভাবছে, এই তো চলছি সোনার হরিণের পেছনে। আবার কেউ ফেলে দীর্ঘনিঃশ্বাস। যেন কোনো এক নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত। এই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনাগুলো তাদের, যারা প্রবাসী।
করোনা ভাইরাসের কারনে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে আজ বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ লক ডাউন দু’টোই। বন্ধি হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। বিশেষ করে বিদেশে অবস্থানরত বাঙালি প্রবাসিরা।
মা-বাবার স্বপ্ন, স্ত্রী সন্তানদের স্বপ্ন পূরন করার এক তীব্র আশা নিয়ে নিজ দেশ ত্যাগ করে ভিন্ন সমাজ সংস্কৃতির আরেকটি ভূখণ্ডে অবস্থান করা প্রবাসিদের করুণ গল্প গুলো অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যায়।
যে প্রবাসিদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে এসে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে সেই মহানায়কেরাই আজ পড়েছে বিপাকে। পড়েছে এক কালো অন্ধকারময় ভবিষ্যতের হাতছানির কবলে। রুমে বন্ধি হয়ে পড়েছে কোটি কোটি প্রবাসি বাঙালি।
বাহিরের কাজ বন্ধ, কারফিউ জারি হয়েছে অনেক দেশে। বিদেশি প্রশাসনিক আইন কাঠামো কতটা শক্তিশালী তা সবাই আঁচ করতে পারছেন। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার বন্ধ করে দিয়েছে কাজ, সাথে বন্ধ দেশে ফিরে আসা এবং দেশ থেকে প্রবাসে যাওয়া। এমনই যন্ত্রণাময় দিনযাপন করছে কোটি কোটি প্রবাসি বাঙালি।
কুয়েত প্রবাসি কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানার শেখের গাঁও গ্রামের সন্তান- জনাব হারুন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমরা প্রবাসে এসেছি হাজারো স্বপ্ন নিয়ে। মাথা ঘাম পায়ে ফেলে দিন রাত কাজ করেছি পরিবারের জন্য। পরিবারের মানুষ গুলোকে একটু শান্তিতে রাখবো বলে। কিন্তু এখন রুমের বাহিরেই বের হতে পারছি না কাজ করবো তো পরের কথা। রুম থেকে বের হলেই পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে। আমরা প্রতিদিন কাজ করে টাকা পাই এখন কাজ নেই, ইনকাম নেই, পরিবার চলবে কি করে জানি না। রুমে বসে বসে শুধু পরিবারের কথাই চিন্তা করি।
একই থানার কুয়েত প্রবাসি জনাব আব্দুল খালেক মাষ্টার বলেন- আমরা প্রবাসে অনেক কষ্টের মাঝে আছি। রুম থেকে বের হতে পারছি না, কাজ করতে পারছি না। আমাদের পরিবারের মানুষগুলো বাঁচবে কি করে। তবুও আমরা দেশের মানুষের জন্য দিনরাত দোয়া করছি ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য।দিনরাত আল্লাহর কাছে দোয়া করছি দেশের মানুষদের ভালো রাখতে। এই দুর্দিনে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে করতে আমরা হয়ে আছে জীবন্ত লাশ। আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। বিদেশের জমিনে মারা গেলে পরিবারের মানুষ কেউ দেখতেও পারবে না আমাদের।
মালোশিয়া প্রবাসি- রবিউল আউয়াল বলেন- কয়েকমাস হলো বিদেশে এসেছি এখনো কোন কাজ ঠিক মতো পাইনি। তারমধ্যে ভাইরাসের জন্য রাস্তায় বের ও হতে পারছি না। মানুষের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে বিদেশে আসলাম। যদি কোন কাজ করতে না পারি ঋণ কিভাবে দিবো, মা-বাবা,ভাই-বোনদের খাওয়াবো কি। সারাদিন রুমে বসে থাকি আর দেশের কথা চিন্তা করে কান্না করি। আমার এখন দেশে চলে আসতে মন বড় কাঁদে।
সৌদিআরব প্রবাসি জসিমউদদীন বলেন- আমাদের যদি রুমে বন্ধি করে না রেখে জেল খানায় বন্ধি করে রেখে দিত তাহলে ভালো হতো।অন্তত দুই বেলা খাবার ঠিক মতো পেতাম। এখন রুম থেকে না বের হতে পারছি না কাজ করতে পারছি। আমি খাবো কি আমার পরিবারের জন্য পাঠাবো কি? আমাদের বেঁচে থাকায় এখন দায় হয়ে পড়েছে। জানি না এমন কষ্টের দিন কতদিন দেখতে হবে।
এমন হাজারো প্রবাসিদের কষ্টের সময় গুলো, তাদের একাকিত্বের করুণ গল্প গুলো, পরিবারের চিন্তায় দিনরাত এক করে ফেলার মুহূর্ত গুলো অজান্তেই অজানা রয়ে গেল।
প্রবাসিদের অর্জিত অর্থের ফলে যে দেশের অর্থনীতি আজ এত শক্তিশালী সে দেশের মানুষের জন্যই যতসব আয়োজন প্রবাসিদের ঘিরে। হাজার হাজার মাইল দুরে থেকেও প্রবাসিদের মন, চিন্তা পড়ে আছে নিজ দেশের ভোর বেলার কাক, মুরগ, পাখি, গাছপালা সহ মা ও মাটির প্রতি।
এই দুর্দিন হয়তো সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদে কেটে যাবে একদিন। বিশ্ব সভ্যতা মনে রাখবে প্রবাসিদের এমন মহিমান্বিত ত্যাগ, ভালোবাসা আর দেশাত্মবোধ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।