৩০ মে ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে জারি করা লকডাউন ও কড়াকড়ি শিথিল করার পর বিপদে পড়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। মূলত স্থবির হয়ে পড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার কড়াকড়ি শিথিল করলে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বাধ্য হয়ে কয়েকটি দেশ আবার কঠোর ব্যবস্থা জারি করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশ কড়াকড়ি শিথিল করার পর বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন সাত লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ১৬ হাজার ৩০৪ জন। এটাই এ মহামারিতে এক দিনে বিশ্বে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। ২০ থেকে ২৮ মের মধ্যে পাঁচ দিনই দৈনিক আক্রান্ত হয়েছে এক লাখের বেশি লোক। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, পেরু, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বেশকিছু দেশে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাস এখনও বিদায় নেয়নি। লোকজনের চলাচল যেভাবে বেড়েছে তাতে আরেক দফা প্রাদুর্ভাবের জন্য বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

এর মধ্যেই করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোও নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছে কিংবা করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্তত সাতটি দেশে লকডাউন আংশিক বা পুরোপুরি শিথিলের পর পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পুনরায় কড়াকড়ি আরোপ করতে হয়েছে। এ দেশগুলো হলো- চীন, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইরান, লেবানন ও সৌদি আরব। সর্বশেষ গত দু’দিনে দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কা আবার কড়াকড়ি আরোপ করেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল দেশ হিসেবে বিবেচিত দক্ষিণ কোরিয়ায় কড়াকড়ি অনেকাংশে তুলে নেওয়ার পর সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে খুলে দেওয়ার মাত্র দু’দিনের মাথায় গতকাল শুক্রবার ২০০টি স্কুল আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ৭৯ জন রোগী। গত দুই মাসের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ সংক্রমণ। গতকাল সংক্রমিত হয়েছে আরও ৫৮ জন। সিউলের জাদুঘর, পার্ক ও ক্যাফেও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্ক নিউং-হু বলেছেন, করোনার বিস্তার ঠেকানো না গেলে সরকার আবার সামাজিক দূরত্ব রক্ষার নির্দেশ দেবে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন দেশবাসীকে ‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের’ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই হবে দীর্ঘস্থায়ী।
কারফিউর মতো কঠোর ব্যবস্থা জারি করে করোনার বিস্তার রোধে দারুণ সাফল্য পেয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। তবে সম্প্রতি এই কঠোর ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার পর পরিস্থিতির অবনতি হলেও বৃহস্পতিবার থেকে আবার আংশিক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। চলতি মাসে কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য চালুর অনুমতি দিয়েছিল লেবানন সরকার। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলেও আবার চার দিনের লকডাউন জারি করা হয়। অবশ্য পরে তা শিথিল করা হয়েছে।
চীন সরকার বিশ্বে প্রথম লকডাউন জারি করেছিল করোনায় বিধ্বস্ত উহানে, এরপর দেশের অন্যত্র। উহান শহরের লকডাউন শিথিল করার পর করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে পাঁচ দিনের মাথায় আবার কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। চীনের আরও কয়েটি শহরে পরিস্থিতির অবনতির পর সম্প্রতি কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছে।
জার্মানি লকডাউন শিথিল করার পর কিছু জায়গায় আবার কড়াকড়ি আরোপ করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সৌদি আরব ও ইরান বিভিন্ন সময় কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করার পর পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। ফলে তারা আবার কড়াকড়ি আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে। আরও বহু দেশ এভাবে কড়াকড়ি শিথিলের কারণে করোনা সংক্রমণের উত্থান-পতন দেখেছে। ফলে সিদ্ধান্ত বারবার বদলাতে হয়েছে তাদের।
তবে করোনায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালিতে নতুন সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে। এই চারটি দেশে মারা গেছেন এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি লোক। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু কমলেও আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি কমেনি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সার্বক্ষণিক হিসাব রাখা ওয়ার্ল্ডওমিটারের হিসাবে গতকাল শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ রোগে বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি লোক। এর মধ্যে তিন লাখ ৬৩ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ লাখ ৯ হাজার সুস্থ হয়েছেন। সূত্র :বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি, রয়টার্স ও আলজাজিরা।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।