২৯ জুন ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :
অতিরিক্ত বিলের বোঝা যখন গ্রাহকের কাঁধে তখন ভুতুড়ে বিলের জন্য দায়ীদের শাস্তি দিতে টাস্কফোর্স গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে উত্থাপিত অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কেন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিল বাতিল যাচাই-বাছাই শেষে আবার বিল না দিলে গ্রাহকরা উপকৃত হবে না। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অবস্থান স্পষ্ট করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) আবাসিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে গ্রাহকের ব্যবহার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল কেন করা হলো সে বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়। বিতরণ কোম্পানির প্রধানরা ওই বৈঠকে এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ৩০০ ভাগ অতিরিক্ত বিল করার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এসব বিল আপাতত দিতে হবে না এমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়াও হয়নি। ওই বৈঠকেই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন অতিরিক্ত বিল করার যখন প্রমাণ পাওয়া গেছে তখন বিল বাতিল না করলে সমস্যাটি থেকেই যাচ্ছে। টাস্কফোর্সই যখন গঠন করা হয়েছে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রাহকের বিল বাতিল বা স্থগিত না করলে বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হওয়া জরুরি। যা করা হয়নি।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, এইভাবে বিল দিয়ে ভোক্তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে, তাদের আতঙ্কগ্রস্ত করা হচ্ছে। বিলের বিষয়ে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে আমি মনে করি না তা গ্রাহকদের রিলিফ দেওয়ার উদ্দেশে করা হয়েছে। এটি অর্থবহ হয়নি। ভোক্তাদের পরিত্রাণ দিতে হলে প্রথমত, এখন যে অতিরিক্ত বিল দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এই সময়ে বিল কিভাবে দেবে তার একটি নীতিমালা করা দরকার। যে নীতিমালায় থাকতে হবে যে, যদি মিটার রিড করতে না পারে তাহলে গত বছরের এই মাসের বিল কত ছিল তা ধরে বিল করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই মাসের তুলনায় কোনওভাবেই বিল বেশি আসা যাবে না। তিনি বলেন, বিল বাতিল না হলে টাস্কফোর্স গঠনের কোনও মানে নাই। বিল বাতিল করে কিভাবে তা সমন্বয় করা হবে সেটি আগে চূড়ান্ত করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
শামসুল আলম বলেন, হুট করে তিন/চারগুণ বেশি বিদ্যুতের বিল মানুষ কিভাবে দেবে? তাদের কি আর্থিক সামর্থ্য হঠাৎ করেই তিন/চারগুণ বেড়ে গেছে? তাহলে তারা এই অতিরিক্ত বিল কিভাবে দেবে? সমন্বয় তো পরের বিষয় এখন মানুষ এই অতিরিক্ত বিল দিতেই তো পারবে না। এইগুলা বন্ধ করে দ্রুত বিইআরসির মাধ্যমে বিল বাতিল করে নীতিমালা করা দরকার। এরপর বিল আবার ঠিক করে গ্রাহকদের কাছে পাঠানো হোক।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, সরকারের সব খাতের মতো বিদ্যুৎ খাতও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা এই করোনার সময় লোকসানের অজুহাত দিচ্ছে। অথচ গত কয়েক বছরে এই খাতের আয় সম্পর্কে সবাই ধারণা করতে পারে। এই অবস্থা তারা লোকসানের কথা বলছে, আর সেই লোকসান কমাতে জনগণের ঘাড়ে অতিরিক্ত বিলের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। জনগণের টাকায় বেতন পাওয়া বিতরণ কোম্পানি এখন জনগণকেই নির্যাতন করছে। তারা জেনে বুঝে ইচ্ছে করেই এই অতিরিক্ত বিল করেছে। তিনি বলেন, টাস্কফোর্স গঠন করে কিছুই হবে না। কারণ টাস্কফোর্সে যারা আছেন তারা তো সেই দলেরই লোক । তারা নিচের দিকে কিছু কর্মচারীকে হয়তো শাস্তি দেবেন, লোক দেখানো ছাড়া আর কিছু হবে না। কিন্তু জনগণকে অতিরিক্ত বিল দিতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে ছাড় দেবে না। তিনি বলেন, আমি মনে করি অবিলম্বে এই অতিরিক্ত বিল বাতিল করতে হবে। বাতিল করে বিল ঠিক করে আবার বিল দিতে হবে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। ভোক্তা এখনও জানে না আসলে তাদের ভাগ্যে কী রয়েছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, বিল স্থগিত করে আবার নতুন করে বিল করতে পারে। এটি এমন কোনও কঠিন বিষয় নয়। এই ধরনের ঘটনায় সরকারের প্রতি মানুষের নেতিবাচক চিন্তার জন্ম দেয়। এইগুলো দ্রুত সমাধান করা উচিত। তিনি বলেন, প্রতিবছরই জুন মাসের দিকে এসে বিল কিছুটা বেশি করা হয়, যা পরের মাসে অ্যাডজাস্ট করে দেওয়া হয়। যাতে করে বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের টার্গেট ঠিক রাখতে পারে। এতদিন এটা তেমন চোখে পড়েনি কারো। এইবার অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বেশি বিল করায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বেশ ইতিবাচক একটি প্রভাব তৈরি হয়েছে, এ ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা দরকার। বিল বাতিল করার মাধ্যমেই তা করা যেতে পারে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।