ঢাকা, সোমবার, ১৩ জুলাই ২০২০ (স্টাফ রিপোর্টার): রিজেন্ট হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের করোনা সনদ জালিয়াতির ঘটনায় আটকে গেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ। অর্থাৎ যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তারা আপাতত ক্ষতিপূরণ পাবেন না। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন, কেবল তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আক্রান্তদের ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাননি। ইতোমধ্যে ১২ থেকে ১৪টি আবেদন জমা পড়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। খবর অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের।
করোনার ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করায় গত ২৩ এপ্রিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর ধরা হয়। পরিপত্রে বলা হয়- করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় যেসব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারি কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের কেউ আক্রান্ত হলে গ্রেড ভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করে দেবে সরকার। তাঁদের কেউ মারা গেলে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদের দেওয়া হবে ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে।
কিন্তু সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া করোনা সনদ কেলেঙ্কারির ঘটনায় করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে অর্থ বিভাগ। তবে ইতিমধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে সেটি কতদিন নাগাদ শুরু হবে তা নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আপাতত যারা মারা গেছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। করোনা পরীক্ষা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় আপাতত আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না।
অন্যদিকে ইতোমধ্যে অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯ এর মোকাবিলার সময় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। জানা গেছে, দেশের জন্য প্রথম জীবন উৎসর্গকারী চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিনের পরিবার সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করে। কিন্তু আবেদনের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি তার পরিবার।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান ডা. মঈন উদ্দিন। এরপর গত ২৭ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া চিকিৎসক মঈন উদ্দীনের পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গত ২৭ এপ্রিল আবেদনটি করেন মঈন উদ্দীনের স্ত্রী চৌধুরী রিফাত জাহান। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ আবেদন অনুযায়ী টাকা ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। গতকাল পর্যন্ত আড়াই মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি তার পরিবার।
এ বিষয়ে ডা. মঈন উদ্দিনের ভায়রা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. তানভীর মোহিথ গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, আবেদনের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে ১২ থেকে ১৪টি ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে মৃত এবং আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন আবেদন রয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত নথি খোলা না হওয়ায় ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড় শুরু হয়নি।
জানা গেছে, অর্থ বিভাগের যে শাখা থেকে এ সংক্রান্ত কাজ হওয়ার কথা সেই বিভাগের বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে অর্থছাড়ের বিষয়টি বিলম্ব হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব তারা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ ছাড় করবে। অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, ক্ষতিপূরণের আওতায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস পজিটিভের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীসহ মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা ভাইরাস পজিটিভের প্রমাণ বা মেডিক্যাল রিপোর্টসহ নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করতে হবে।
-সূত্র : আমাদের সময়
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।