November 23, 2024, 5:29 pm

আওয়ামী লীগে এখন আর গ্রুপিং ঝামেলা নাই: শেখ হাসিনা

২২ নভেম্বর ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

অতীতে বিভিন্ন সময়ে দলের ভেতরে প্রভাবশালী নেতাদের গ্রুপিংয়ের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি আসার পর সেই গ্রুপ-ট্রুপ চলে গেছে, এখন আর গ্রুপের ঝামেলা নাই।’

রোববার (২২ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ‘বীরপ্রতীক গাজী সেতু’সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করেন। এসময় মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলাধীন মধুমতি নদীর উপর এলাংখালী ঘাটে ৬০০.৭০ মিটার দীর্ঘ ‘শেখ হাসিনা সেতু’; যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় সড়ক ও জনপথের যশোর-খুলনা সড়কের ভাঙ্গাগেট (বাদামতলা) হতে আমতলা জিসি ভায়া মরিচা, নাউলী বাজার সড়কে ভৈরব নদীর উপর ৭০২.৫৫ মিটার দীর্ঘ সেতু; এবং পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

৮১ সালে ৫০/৬০জন কর্মী নিয়ে ট্রাক ভাড়া করে নাটোর যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বললাম, এখান থেকেও আমাদের যা লাগে, হাতে কিছু আমাদের থাকতে হবে তো, খুন্তা, দা, লাঠিসোঠা যেগুলি লাগে সেগুলি জোগাড় করে নিয়েই কিন্তু নাটোরে যেতেই হবে এবং আমি যাবো। সভা করতে পারি না পারি, আমাকে যেতেই হবে। সেইভাবেই কিন্তু আমরা পৌঁছালাম। তখন কিন্তু এই বকুল মামা আমাদের সাথেই তার কর্মী বাহিনী নিয়ে। প্রায় ৩০/৪০জন কর্মী সাথে করে নিয়ে আমাদের সাথে চলে গেলেন রাজশাহী পর্যন্ত। কারণ আমরা নাটোর হয়ে যখন দেখলাম যে খুবই খারাপ অবস্থা ওখানে। আমাদের কর্মীদের চিৎকার, রাস্তাঘাটে পড়ে আছে আহত হয়ে।’

রাজশাহী থেকে ভোরবেলা ডিসিকে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স চাওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনাও স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করলাম, ভাড়া করে সকাল বেলায় আবার আমরা রওয়ানা হলাম নাটোরের পথে। এই বকুল মামা কিন্তু তার কর্মী বাহিনী নিয়ে আমার সাথে এবং আমাদের নেতাকর্মীরা তো সব আছেই। আমরা নাটোরে ঢোকার সময় রেল ক্রসিং আছে, ওখানে ঢোকার সাথে সাথে আমাদের সামনে বোমাবাজি শুরু করল বিএনপি। বকুল মামা তার লোকজন নামালেন, লাঠি-সোঠা নিয়ে বোমাবাজদের ধাওয়া দিল, তারপর নাটোরে ঢুকলাম।’

নাটোরের আওয়ামী লীগ নেতা শংকর গোবিন্দ বাবুর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি নির্বাচনে ১৯৭৯ সালে জিয়ার আমলে জিতলেন কেন? সেজন্য চলন্ত ট্রেন থেকে বিএনপি তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। আহত অবস্থায় তখন চিকিৎসার জন্য তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নাটোরের অবস্থা তখন এমনিই ভয়াবহ থমথমে। আমি গিয়ে শংকর গোবিন্দ বাবুর বাড়িতে উঠলাম।’

এরপর সেখান থেকে আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়াসহ বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন তিনি। একই সাথে সেই দিনের চালকের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গিয়েছিলাম সেই অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার সত্যি খুব ভালো একজন মানুষ ছিলেন। ওনাকে অনুরোধ করলাম, যে কয়টা ট্রিপ লাগে আপনি দেবেন, আপনার তেলের দাম যা লাগে দেব, আমার আহতদের উদ্ধার করে নিতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সেই সময় এই দুঃসময়ে কিন্তু রফিকুল ইসলাম বকুল, আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। এই পাবনা যেখানে সর্বহারাদের একটা জায়গা। আর স্বাধীনতার পর যারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার আলবদর, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল; এরা কিন্তু স্বাধীনতার পর পর রাতের সব কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। তার জন্য একদিকে ওখানে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি, অন্যদিকে জামায়াতের একটা বিরাট ঘাঁটি। এই সমস্ত রাজাকার বাহিনী জুটে গেল ওই আলট্রা লেফটিস্ট পার্টি, সর্বহারা, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি; সব অমুক তমুক,আমি এতো নাম জানিও না! যার জন্য ওখানে সবসময় একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকত। সেখানে আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরবর্তীতে যেকোনো কারণেই হোক একসময় সে (বকুল মামা) চলে যায় আমাদের পার্টি ছেড়ে। কারণ আমাদের ওখানে গ্রুপিং ছিল। এতে কোনো সন্দেহ নাই। আর এই গ্রুপিংয়ের কারণেই সে যেকোনো কারণেই হোক বকুল মামা আমাদের পার্টি ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু একটা মানুষের যে অবদান; আমি সেটাকে কখনো অস্বীকার করি না এবং আমি এটা করবো না। কারণ সে যতটুকু করেছে আমাদের জন্য করেছে। আমাদের রফিকুল ইসলাম বকুল তার ছেলেপেলে নিয়ে কর্মী বাহিনী নিয়ে সবসময় আমাদের জন্য প্রস্তুত ছিল। কতবার ফেরি পার হতে গেয়ে ওখানে বাধা পেয়েছি, কিন্তু ঠিক বকুল মামা পৌঁছে গেছেন। সেইভাবেই তার একটা অবদান যেমন মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর সারা বাংলাদেশ যখন সফর করি যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি আমাকে বাধা দেয়, কোথাও গুলি বোমা, আমার গাড়ি আক্রমণ, আমার মঞ্চ পুড়িয়ে দেয়া নানাভাবে। কিন্তু যারা তখন আমার পাশে ছিল এবং এই সাহসে ভর করে এই অবস্থা মোকাবিলা করেছেন তার মধ্যে রফিকুল ইসলাম বকুল একজন। হয়ত যেকোন কারণেই হোক, সে চলে গিয়েছিল আমি জিজ্ঞাসাও করেছিলাম, সে কোন উত্তর দিতে পারেনি। তারপরও আমি বলবো, তার নামে এই চত্বরটা করার জন্য আমি অঞ্জন চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ সে বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ওখানে আমাদের কিছু লোক আপত্তি করেছিল। আমি বলেছিলাম যে আমার আপত্তির কিছু নেই। যেকোনো কারণেই হোক সে চলে যেতে পারে; কিন্তু সে পার্টির সঙ্গে এমন কিছু করেনি যে তার নামটা মুছে ফেলতে হবে। কারণ তার অবদানটা আমাদের মনে রাখতে হবে, সে একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা ওখানে তুলেছে। সেই জন্য সবাই আমরা তার কথা মনে রাখব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাই হোক, আমি কথাগুলি বললাম। কারণ আসলে এসব স্মৃতি তো মনে রাখার কথা না, এটা তো কম দিন হল না। বহুবছর হয়ে গেল। সবার এটা মনে রাখা উচিত। আর সে তো মুজিব বাহিনীরও একজন সদস্য। আর আব্দুস সামাদ আজাদের আত্মীয় ছিলেন এবং তার সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন, এই জন্য গ্রুপ পলিটিক্সে একটু কোনঠাসাও ছিলেন, এটা হলো বাস্তব কথা। যাই হোক, আমি আসার পর সেই গ্রুপ-ট্রুপ চলে গেছে, এখন আর গ্রুপের ঝামেলা নাই।’

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন শেষে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রান্ত থেকে দোয়া মোনাজাত হয়। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি গণভবন প্রান্ত ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ, যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। পাবনার “বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ এ যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা। রূপগঞ্জ প্রান্তে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ অন্যান্যরা যুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা