২২ নভেম্বর ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
রাজধানীতে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। পেঁয়াজ-আলুতে অন্তত ১০-২০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা।
তেলের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখালেও চাল-আলুর দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করছে, তাদের বিরুদ্ধে বাজার মনিটরিং করে জরিমানাসহ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা এ সপ্তাহে আসা শুরু হবে। এ অর্থবছরে তিন লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তেল-পেঁয়াজ ও আলু টিসিবি বিক্রি করছে। এছাড়া অসাধু ধান-চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী বাজারের মুদি দোকানদার হাজী রহমত আলী বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে পাইকারি বাজারে ভোজ্য তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।’
তিনি বলেন, পাম অয়েল ও সয়াবিন তেল লিটারে ১০ থেকে ১৬ টাকার বেড়েছে। পাম তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৮থেকে ৯৫ টাকা, সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় (প্রতি কেজি)। এক সপ্তাহ আগে এক ড্রাম পাম অয়েলের দাম ছিল ১২ হাজার টাকা, এখন সেটা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০০ টাকা। এক ড্রাম সয়াবিন তেলের দাম আগে ছিল ১৫ হাজার ৮০০ টাকা, এখন ২১ হাজার ৫০০ টাকা। আর পেঁয়াজ দেশি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বিদেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬৫ টাকা।
রায়েরবাগের মুদি দোকানদার সবুজ হোসেন বলেন, দাম বাড়ার পর এখন সুপার সয়াবিন আর সয়াবিন কেজি সুপার ৯০ থেকে ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানের দিক থেকে সয়াবিনের চেয়ে পিছিয়ে আছে সুপার সয়াবিন।
যাত্রবাড়ীর জাকেরিয়া রাইস এজেন্সির রাকিবুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পাইজাম চালের দাম মানভেদে ৪৫-৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা হয়েছে। মিনিকেট ৪৯- ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫২-৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ ধানের চাল ৪২-৪৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫-৪৮ টাকা হয়েছে।’
উৎসব, রশিদ, মোজাম্মেল ও বিশ্বাসসহ অন্যান্য নামি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা ২ ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০০ টাকা এবং নাজিরশাইল ২ ৮০০-২৯০০ থেকে বেড়ে ৩০০-৩১০০ টাকা হয়েছে।
রায়েরবাগের পাইকারি চাল বিক্রেতা গোফরান বলেন, চালের দাম মিলাররা বাড়িয়েছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করছি। সরকারের উচিত, অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরেুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
যাত্রাবাড়ী বাজারে আসা ক্রেতা আসলাম হোসেন বলেন, বেশকিছু অসাধু ব্যবসায়ী কথায় কথায় চাল-তেলের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছেন। তারা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ধানের দাম বেশি হলে চালের দাম কিছুটা বাড়ে। এমাসের শেষের দিকে নতুন ধান উঠবে, চালের দাম কমবে।
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, তেল-পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অভিযান চালানোসহ টিসিবি পণ্য বিক্রি করছে। বাজার কারসাজিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ইউসুফ বলেন, পেঁয়াজের ও চালের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। আলুর দাম কয়েক দিনের মধ্যে স্থিতিশীল হবে।
কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে খুচরা বাজারসহ পাইকারী বাজারেও গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া সব মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, আলু, চাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, আদাসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। গত ১৯ নভেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে আলু, চাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে ১৫২ টি প্রতিষ্ঠানকে ৯ লাাখ ৪৯ হাজার ৫ শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত আছে। নিয়মতান্ত্রিক ও নৈতিকতার সাথে ব্যবসা পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীদেরকে অধিদপ্তর সাধুবাদ জানাচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ধান-চাল মজুত ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমদানি করা চাল দ্রুত চলে আসবে, আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।