২ ডিসেম্বর ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
নিজের ছেলেকে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ফ্ল্যাটে বন্দি করে রেখেছিলো এমন সন্দেহে সুইডেনের পুলিশ এক মাকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া মা তার ছেলেকে বন্দি করে রাখা এবং তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করার কথা অস্বীকার করেছেন।
স্টকহোমের উপকণ্ঠে এ ঘটনা ঘটেছে। যে ছেলেকে প্রায় তিরিশ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিলো বলে বলা হচ্ছে, তার বয়স এখন ৪০। তাকে ফ্ল্যাটের মধ্যে খুবই নোংরা পরিবেশে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়।
লোকটির মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিলো। তখন রোববার ঘটনাচক্রে ফ্ল্যাটে যাওয়া একজন আত্মীয়া ছেলেটিকে সেখানে আবিস্কার করে। তাকে এখন হাসপাতালে তার আঘাতের জন্য চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্টকহোমের হ্যানিঞ্জ এলাকায় এই ফ্ল্যাটটি এখন পুলিশ তদন্তের স্বার্থে সিল করে দিয়েছে। সেখানে আসলে কী ঘটেছিলো তা জানতে পুলিশ সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজছে।
যেভাবে ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যায়
অজ্ঞাতনামা এক আত্মীয়া এবং তার সঙ্গী রোববার সন্ধ্যায় এই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন ঐ মায়ের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেছেন এ খবর শুনে। এই আত্মীয়া জানিয়েছেন, তিনি সর্বশেষ এই ফ্ল্যাটে গিয়েছেন ২০ বছর আগে। সেসময় তিনি ঐ ছেলেটির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক করে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
ছেলেটির বয়স যখন ১১ বা ১২ তখন থেকে তাকে স্কুলের খাতা থেকে নাম কেটে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছিলো। রোববার এই নারী ফ্ল্যাটের দরোজা খুলে দেখেন এটি একেবারে অন্ধকার, ধুলায় ঢাকা। এবং সেখান থেকে মুত্র, ময়লা-আবর্জনার পঁচা গন্ধ বের হচ্ছে।
যখন তিনি হ্যালো বলে ডাক দেন, তার জবাবে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না। এরপর তাকে স্তুপ হয়ে থাকা জিনিসপত্রের মাঝ দিয়ে ঘরে ঢুকতে হয়।
রান্নাঘরে শব্দ শুনতে পেয়ে তিনি দেখেন অন্ধকারে এক কোনায় একটা লোক বসা। বাইরে থেকে রাস্তার সড়ক বাতির আলোয় তাকে দেখা যাচ্ছিলো। তার পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঘা হয়ে গেছে।
এই নারী সুইডেনের একটি সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, লোকটি যখন তাকে দেখেন, তিনি উঠে দাঁড়ান, এবং তার নাম ধরে বার বার ডাকতে থাকেন। লোকটির প্রায় সব দাঁত পড়ে গেছে এবং তার কথা ছিলো অস্পষ্ট।
তিনি বলেন, যে কোনো ভাবেই হোক, এত বছর পরেও লোকটি তাকে চিনতে পেরেছে এবং তাকে দেখে ভয় পাচ্ছিলো না।
লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তাররা বিষয়টি পুলিশকে জানায় এবং এরপর তার মাকে আটক করা হয়।
স্টকহোমের একজন সরকারি কৌসুঁলি রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছে, এটি লোকটির শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তবে এর বেশি বিস্তারিত কিছু তিনি আর জানাননি।
পুলিশের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, লোকটিকে কতদিন বন্দি করে রাখা হয়েছিলো, সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে আমাদের ধারণা, খুবই দীর্ঘ একটা সময় তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিলো।
যে নারী এই লোকটিকে ফ্ল্যাটে গিয়ে খুঁজে পান, তিনি সুইডেনের পাবলিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, লোকটির মা এর আগে তার আরেকটি সন্তান হারিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর তিনি তার নাম রাখেন আগের সন্তানের নামে।
একজন আত্মীয়াকে উদ্ধৃত করে সেখানে আরো জানানো হয়, তিনি তার মৃত সন্তানকে ফিরে পেতে চাইছিলেন এবং নতুন সন্তানকে খুব বেশি আগলে রাখতে চাইতেন।
‘লোকটি যে শেষ পর্যন্ত উদ্ধার পেয়েছে এবং বেঁচে গেছে, সেজন্যে আমি কৃতজ্ঞ’, বলছেন এই আত্মীয়া। খবর: বিবিসি বাংলা।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।