November 26, 2024, 5:30 am

কঠোরভাবে অপরাধ দমনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

০৩ জানুয়ারী ২০২১, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

সাইবার অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধ কঠোরভাবে দমন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশে সাইবার অপরাধ ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার কারণে অপরাধ হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন মাদক মানিলন্ডারিং মানবপাচারের মতো অপরাধও হচ্ছে। এসব কঠোরভাবে দমন করতে হবে।’

রোববার (৩ জানুয়ারি) ৩৭তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন তিনি।

এ অনুষ্ঠানে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। আমি আশা করি পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ বাহিনী জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। সাইবার ক্রাইম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।’ ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি ভুক্তভোগীদের এই নম্বরে অভিযোগ করার আহ্বান জানান।

প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যেসব অপরাধ সংগঠিত হয় সেগুলো দমন করতে হবে বলে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। গুজব বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস আছে। সেগুলোর মাধ্যমে বিশেষ করে কিশোর বা উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের বের করে তারা যাতে সুস্থ জীবনে ফিরে আসে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। গুজব রটানো বা এই ধরনের কাজ যেন কেউ করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’

সব ধরনের অপরাধ দমনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী ও শিশুর প্রতি যে সহিংসতা চলছে তা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব সামাজিক অপরাধ বা নানা ধরনের পারিবারিক অপরাধ দমনে পুলিশ অনবদ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এটাকে আরও দক্ষতার সঙ্গে দমন করতে হবে। মানি লন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম, মানব পাচার শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক অপরাধ। এ থেকে দেশকে রক্ষা করা। তাছাড়া সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জরুরি সেবা প্রদান করে পুলিশ ভুয়সী প্রশংসা পাচ্ছে এবং ভালো কাজ করে যাচ্ছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনেও পুলিশ যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। এজন্য অনেকে (পুলিশ) জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন।’

মাদকের হাত থেকে প্রতিটি পরিবারকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাদক আমাদের সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে, মাদকের হাত থেকে প্রতিটি পরিবারকে রক্ষা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে জনগণের শান্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। মনে রাখবেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, জনগণের সেবা করা এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা আমাদের বেশি প্রয়োজন।’

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদস্যদের জনগণের আস্থা, বিশ্বাস এবং ভালোবাসা অর্জন করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যদি আপনি জনগণের ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন তবে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা কোনো বিষয় নয়। জনগণের সহায়তায় যে কোনো ধরনের অপরাধ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। আপনাদেরকে সেভাবে প্রস্তুত হতে হবে এবং আমরা তাই চাই।’

২০০৯ সাল থেকে পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে এই বাহিনীর জন্য বাজেট ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা, তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের ইউনিট গঠন করেছে যেমন পুলিশ তদন্ত ব্যুরো, পর্যটন পুলিশ, বিশেষ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যাটালিয়ন, শিল্প পুলিশ, মহিলা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য দুটি পৃথক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন করতে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করা হয়েছে।

এ সময় পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বক্তব্য শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্রান্তে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন– স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এর আগে আসাদুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ভালো ফলাফলের জন্য ক্যাডেটদের মাঝে বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণ করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা