০৩ জানুয়ারী ২০২১, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
পুলিশ বাহিনীর প্রসংশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বাহিনীকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি। সেই সাথে পুলিশের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরকারের নেওেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানান সরকার প্রধান।
রোববার (৩ জানুয়ারি) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহীর সারদায় ৩৭তম বিসিএস-পুলিশ ব্যাচের শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেসময় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ মিশনেও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসিত হয়েছে। মহিলা পুলিশদেরও ভূয়সী প্রশংসা শুনতে পাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের পুলিশের সমপর্যায়ে উন্নীত করতে পুলিশের বাজেট ও জনবল ব্যাপক হারে বাড়িয়েছি। ২০০৯ সালে পুলিশের মোট বাজেট ছিল তিন হাজার কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পুলিশের মোট বাজেট দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।
সরকার প্রধান বলেন, গত ১২ বছরে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামােতে ১ হাজার ৫০১টি ক্যাডার পদসহ ৮২ হাজার ২৩১টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের জনবল ২ লাখ ১২ হাজার ৮৩৬ জন। সারাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমনে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামােতে নতুন ইউনিট গঠন অব্যাহত আছে। পুলিশ ব্যুরাে অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। শিল্প ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করা হয়। এছাড়া নারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, এয়ারপাের্ট আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও কক্সবাজার এলাকার নিরাপত্তার জন্য দু’টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু তা-ই নয়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে পুলিশ এন্টি টেরােরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেরােরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করা হয়েছে। অপরাধী শনাক্তকরণ এবং মামলা তদন্তে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার পুলিশ সেন্টার , ডিএনএ ল্যাব, Automated Finger Print Identification System এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশে সংযােজিত হতে যাচ্ছে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ যাতে অপারেশনাল ডিউটিতে অফিসার এবং ফোর্সরা হ্যান্ড ফ্রি রেখে অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
পুলিশ সদস্যদের কল্যাণের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ভিত্তি আমাদের সরকারই গঠন করে দিয়েছে। ইতােমধ্যে পুলিশের জন্য কমিউনিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিকে Centre of Excellence হিসেবে গড়ে তুলতে সাংগঠনিক কাঠামাে সংস্কার , জনবল বাড়ানো, অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি এবং লজিস্টিকস সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের যুগােপযােগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্যদের জন্য দেশীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রকে আমরা বিস্তৃত করেছি।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আশা করি, বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজকের নবীন কর্মকর্তারাও দেশের এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।
এসময় সরকার প্রধান পুলিশ সদস্যদের জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে এবং আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষের জীবনের শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।
বাংলাদেশের পুলিশকে জাতির পিতা ‘স্বাধীন দেশের পুলিশ’ বলেছিলেন উল্লেখ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন- ‘একটা কথা ভুললে চলবে না তোমাদের, তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও, তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও, তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা’।
“অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ একটা কথা এবং নির্দেশনা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। আজকে নবীন পুলিশ অফিসাররা তোমরা শপথ গ্রহন করেছে, সেই শপথ নিয়েই তোমাদের চলতে হবে। সেই সাথে জাতির পিতার নির্দেশনাগুলোও তোমাদের মেনে চলতে হবে।”
জাতির পিতার চিন্তার বাস্তবায়ন করতে হলে পুলিশ বাহিনীর অনেক দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আশা করি এই দায়িত্বটা পালন তোমরা করবে। তোমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছ, তোমাদের শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব, সততা এবং নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে চলতে হবে। সব সময় দেশের মানুষের পাশে থাকতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। মানুষের সেবা করাটাই তোমাদের কর্তব্য। সেটা মনে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আরও একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করতে চাই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চ্যুয়ালি প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপাররা হলেন- ‘বেস্ট শুটার’ ও ‘বেস্ট ফিল্ড পারফর্মার মাে. আবুল হােসাইন, বেস্ট ইন হর্সম্যানশিপ’ মােহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম, ‘বেস্ট একাডেমিক’ ও ‘বেস্ট প্রবেশনার’ এ দুটিতেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন স্নেহাশীষ কুমার দাস। প্যারেডে ১৩ জন নারী অফিসারসহ ৯৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মােস্তাফা কামাল উদ্দীন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাে. শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা, অতিরিক্ত আইজিপিরা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং আইজিপি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি চত্বরে একটি করে গাছের চারা রােপণ করেন। তারা শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।