November 21, 2024, 1:56 pm

জীবন ও জীবীকা গ্যাড়াকলে

৫ এপ্রিল ২০২১,বিন্দুবাংলা টিভি. কম, এম এইচ  বিপ্লব  সিকদার  :  করোনাভাইরাস প্রকোপের দ্বিতীয় ধাপ লাফিয়ে লাফিয়ে উর্ধগতিতে চলছে ফলে , দূ:শ্চিন্তা, হতাশা দূর্বিষহ হয়ে পরেছে জনজীবনে। বিশেষ করে দিন আনে দিন খায় যারা, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের উপর দিয়ে একধরনের মুগুর পিটা ও ঘুর্ণিঝড় বইছে যা অসহনীয়,নির্বাক, নির্বোধ, জ্যান্ত লাশ। হাত পাতা, লাজ লজ্জা, বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফুটেনা এমন পরিবার গুলো আজ নিজেরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার চাইতে অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বেশি চিন্তিত। করোনাভাইরাস এর প্রথম ছোবলে ধার কর্জ করে স্বল্প বিনিয়োগ করা অর্থ খরচ করে কোনরকম রক্ষা পাওয়া মানুষ গুলো পূনরায় জীবন ও জীবীকা নির্বাহ করতে লোন, কর্জ করে ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছেন ঠিক এই মূহুর্তে আবারও করোনার ছোবল ফলে রাষ্ট্র চলাচলের বিধি, স্বাস্থ্য বিধি, দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন মানতে হবে নচেত অপরাধী হতে হবে এই ভাবনা পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে আসছে পূজীহীন মানুষের। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ধরাশায়ী হবে নিশ্চিত অন্তত করোনার প্রথম ছোবলে জীবন বেচে যাওয়া পূজী হারিয়ে নতুন স্বপ্ন নিয়ে পুনঃ বিনিয়োগকারী স্বল্প ও মাঝারি ব্যবসায়ী গুলো। সরকারি, চাকুরী জীবীরা অন্তত বেতন নির্ভরশীল হয়ে চলতে পারলেও অন্যান্য ছোট উদ্যেক্তা গুলো এইবার কি হবে সেই চিন্তার অবসান হবার নয়। এই মহামারির মধ্যেও দূর্নীতিবাজ, কালো বাজারিদের বেপরোয়া হয়ে উঠা, অপরাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠা, সব মিলিয়ে নীপিড়নের যাতাকলে পৃষ্ট হয়ে জীবন যাবে নাকি করোনাভাইরাস এ জীবন যাবে এই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় পূজিহীনদের। গণমাধ্যম কর্মীদের কথা কিছু বললাম না কারন ইতিমধ্যেই গণমাধ্যম মালিকরা গণহারে কর্মী ছাটাইয়ের ফলে বেকার হয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ধাক্কায় কি হবে একমাত্র আল্লাহ জানে,। ইতিমধ্যে রাজধানীতে ভাড়ায় বসবাসরত অনেক পরিবার পেট বাচার তগিদে ঢাকা ছাড়ছেন, গ্রামে গিয়ে কি করবে সে চিন্তা ভর করে আছে মাথায়। পুজিবাদীরা করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পেতে যথেষ্ট নিয়মনীতি অনুসরণ করলেও অনেকেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবার কেউ কেউ গত হয়ে গেছে বা আরও যাবে বা না যাবে তা একমাত্র আল্লাহ জানে। কি হচ্ছে, কি হবে, কেউ রক্ষা পাচ্ছেনা, কে কোথায় অবস্থান নিবে, কতদিন এইভাবে চলবে এসব চিন্তায় জীবন ও জীবীকা উভয়ই দূর্বিষহ। একশ্রেণির লোক ধান্দা, চান্দা, লাঠিয়াল হয়ে ফাঁকা মাঠে পোয়াবারো। ব্যবস্থাপনায় যদি স্বচ্ছতা, জবাবদীহিতায় জোর না দিয়ে শুধু বুলি উড়িয়ে নিজে বা নিজেরা বেচে যাবে আর অন্যরা “ছাইরা দে মা কাইন্দা বাচি” হীন পরিস্থিতিতে পড়ে তা হলে এ দায় কার? সুষম বন্টন, অধিকার, বঞ্চিত করে, অব্যবস্থাপনায় নৈরাজ্যের দায় অন্যের ঘারে চাপিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার সম্ভব কিন্তু দায় এড়ানো কি সম্ভব? বিবেকের কাঠগড়ায় সবাইকেই দাড়াতে হবে। যত কিছু হবে, যা ঘটে অদৃশ্য ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যথা সম্ভব পাওয়া নাগরিকদের অধিকার। সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা,পরিকল্পনায় সকলের অংশগ্রহণ না থাকলে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য জীবন জীবিকা গ্যড়াকল থেকে রেহাই পাওয়া অসম্ভব যা এখনই টের পাচ্ছেন বিশাল জনগোষ্ঠী। যা যা বিধিনিষেধ মানতে হবে

এক. সকল প্রকার গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া বিদেশগামী/প্রত্যাগতদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না; দুই. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস এবং তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে; তিন. সকল সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত অফিস-আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনে সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণকাজ চালু থাকবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ শিল্প-কারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে; চার. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না;

 

পাঁচ. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করা যাবে। সেখানে বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না; ছয়. শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানগুলো পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মচারীদের আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে মার্কেটে যেতে পারবেন না; সাত. কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে; আট. ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে; নয়. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকার সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে; দশ. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে এবং এগারো. এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনুনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এই সব সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে কিছু বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞান সম্মত না বলে মত দিয়েছেন দৈনিক দেশ পত্রিকার সূত্রে উঠে এসেছে। সকলেই এই ভাইরাসের মোকাবিলায় স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন করে এবং সকল জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে যতটুকু সম্ভব সুশৃঙ্খল জীবন ও জীবিকা চলে নচেৎ এই গ্যাড়াকল থেকে রক্ষা পাওয়া কতটা সম্ভব আল্লাহ জানে।

লেখক : সাংবাদিক।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা