এম এইচ বিপ্লব সিকদার।।
রাসেল ভাইপার( চন্দ্রবোড়া) আতঙ্কে বাংলাদেশের মানুষ। ইতিমধ্যে বিষধর এই সাপের ছোবলে অনেক প্রানহানীর খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেক জন একেক মনগড়া পোস্ট দিচ্ছেন। সচেতন হোন এমন লিখেও মমনগড়া লেখালেখি সহ সারা দেশে আতঙ্কের পাশাপাশি কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। এই সাপ নিয়ে উইকিপিডিয়া সাধারণ বিষধর সাপের মতই বলছে। এর ভ্যক্সিনও আছে। এই প্রজাতির সাপ বাংলাদেশে আগে থেকেই আছে এমনকি এর ছোবলে অনেক মানুষের প্রাণ হানী হয়েছে। এবার এর উপদ্রবের মাত্রা বেরে যাওয়ায় সারাদেশে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। উইকিপিডিয়ার সূত্রে এই সাপের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো —
অন্যান্য সাপের মতোই চন্দ্রবোড়াও সাধারণত মানুষকে এড়িয়েই চলে, কিন্তু লোকালয়ের কাছাকাছি ক্ষেতে কিংবা ঘাসজমিতে, কিংবা অনেক সময় ইঁদুর শিকার করতে লোকালয়ে ঢুকে পড়ার ফলে মানুষের সঙ্গে এর সংঘাত প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ কেবল এ সাপটির কামড়েই প্রাণ হারান। আক্রমণের ক্ষিপ্র গতি ও বিষের তীব্রতার কারণে ‘কিলিংমেশিন’ হিসেবে বদনাম রয়েছে সাপটির।[১১] তবে এই সাপ সম্পর্কে নানা অতিরঞ্জিত গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রজনন
সাপ সাধারণত ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। তবে চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। ফলে সাপের বাচ্চাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে।[৪] এরা বছরের যে কোনো সময় প্রজনন করে। তবে মে থেকে পরের তিন মাস প্রজনন সবচেয়ে বেশি ঘটে।[৪] একটি স্ত্রী সাপ গর্ভধারণ শেষে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে কোনো কোনো চন্দ্রবোড়া সাপের ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়ার রেকর্ড আছে।[১২][১৩]
বিষ
চন্দ্রাবোড়ার বিষদাঁত solenoglyphous, অর্থাৎ মুখ বন্ধ করলে দাঁত ভাঁজ হয়ে মুখের সঙ্গে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে।[১৪] একটি চন্দ্রবোড়া সাপ এক ছোবলে বেশ খানিকটা বিষ ঢালতে পারে। পূর্ণবয়স্ক সাপের ক্ষেত্রে বিষের পরিমাণ ১৩০-২৫০ মিলিগ্রাম, ১৫০-২৫০ মিলিগ্রাম এবং ২১-২৬৮ মিলিগ্রাম মাপা হয়েছে। ৭৯ সেমি (৩১ ইঞ্চি) গড় দৈর্ঘ্যের শিশু চন্দ্রবোড়ার বিষের পরিমাণ ৮ থেকে ৭৯ মিলিগ্রাম (গড় ৪৫ মিলিগ্রাম) অবধি দেখা গেছে।[১৫]
লক্ষণ
চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে তাৎক্ষণিক ক্ষতস্থানে ব্যথা শুরু হয় ও কিছুক্ষণের মধ্যে ক্ষতস্থান ফুলে যায়। রক্তক্ষরণ এর একটি সাধারণ লক্ষণ। এছাড়া রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে বমি হয় ও মুখমণ্ডল ফুলে যায়। যথাযথ চিকিৎসা না নিলে ২৫-৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিডনি অকার্যকর হয়ে যায়। চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমোটক্সিক, অর্থাৎ এর প্রভাবে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয় ও বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- ফুসফুস, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[১০]
অ্যান্টিভেনম চিকিৎসা
ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে বিষধর সাপের বিষ প্রতিরোধের জন্য যে polyvalent antivenom (ভারতের Haffkine Institute এ তৈরি) প্রয়োগ করা হয়, তার দ্বারা চন্দ্রবোড়ার বিষেরও প্রতিরোধ সম্ভব।[১৬]
চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রয়োগ
চন্দ্রবোড়ার বিষ রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, একারণে হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে রক্ত জমাট বাঁধা সংক্রান্ত পরীক্ষায় এর ব্যবহার রয়েছে। রক্ত জমাট বাঁধা, গর্ভধারণ বিষয়ক জটিলতা যেমন- গর্ভপাতকারী এক রোগ নির্ধারণের পরীক্ষায় (ডাইলিউট রাসেল’স ভাইপার ভেনম টাইম) লুপাস অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্টের উপস্থিতি নির্ণয়ে চন্দ্রবোড়ার বিষ ব্যবহৃত হয়।[১৭]
অবস্থা
২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে বাংলাদেশে মহাবিপন্ন এবং ও বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[১] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২]