September 8, 2024, 1:07 am
সর্বশেষ:
আমাদের অনুমতি ছাড়া মানববন্ধন – সভা হবে না: অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া মেঘনায় অনিয়ম বন্ধের ঘোষণা দিলেন ওসি আব্দুর রাজ্জাক মেঘনায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নৌকার প্রচারণা ক্যাম্পে নিবন্ধনপ্রত্যাশী নতুন দলের চাপে ইসির গেটে কড়াকড়ি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান বুধবার রাত বারোটা থেকে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাঁচ মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া পত্রিকার সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা আরব আমিরাতে দণ্ডপ্রাপ্ত সেই ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা জিকিরের মধ্য দিয়ে বন্যার্তদের উপহার সামগ্রী প্রস্তুতি সংঘর্ষে জড়ানো আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ৩ মামলা, নেওয়া হচ্ছে আদালতে

সিএমপিতে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি ক্রোক

 

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি, ক্রাইম) মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জ্ঞাত আয়ের বাইরে ১১ কোটি চার লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই নির্দেশ দেন। সোমবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেুবুন্নেছা শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।ক্রোকের আদেশ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে উভয়ের মালিকানাধীন স্থাবর সম্পদ আছে মোট ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার এবং অস্থাবর সম্পদ রয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ টাকার।দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করা হয় আদালতে। শুনানি শেষে সোমবার আদালত ক্রোকের আদেশ দেন। মঙ্গলবার ক্রোকের আদেশ হাতে পেয়েছি। এখন আদালতের নির্দেশনা মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।দুদকের আইনজীবী কাজী ছনোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, সিএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়ের বাইরে ১১ কোটি চার লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে। এসব সম্পদ ক্রোক ও জব্দ করা না গেলে তা হস্তান্তর হয়ে যেতে পারে। পরে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। দুদক কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ফ্ল্যাট ও কোম্পানির আংশিক শেয়ারসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এখন থেকে এসব সম্পত্তি দুদক দেখভাল করবেন। পরে এসব সম্পত্তি তদারকির জন্য রিসিভার নিয়োগের আবেদন করা হবে।

তাদের স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নামে নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর হালিশহর মৌজায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৪০ শতক নাল জমি। পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর হালিশহর মৌজায় এক কোটি ২০ লাখ টাকার ৪০ শতক নাল জমি। পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ মৌজায় তিন লাখ টাকার ৩.৩৩ শতক ভিটি। পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ মৌজায় ৮০ হাজার টাকা মূল্যের দুই কড়া তিন সমস্ত ছয় ভাগের এক দন্ত ভিটি ভূমি। পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ মৌজায় ৮৫ হাজার টাকার দুই কড়া তিন সমস্ত ছয় ভাগের এক দন্ত ভিটি। ঢাকা জেলার সাভার থানা ও পৌরসভার অধীন মৌজা জালেশ্বর ও টাট্টিতে ১০৭ শতাংশ চালা জমির মধ্যে ২৬.৭৫ শতাংশ তার। অর্থাৎ চার জনে মিলে জমিটি কেনেন। যার মূল্য ধরা হয়েছে সাত লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। ঢাকায় ‘সাভার সিটি সেন্টার অ্যান্ড সাভার সিটি সেন্টার টাওয়ার’ নামে ১২ তলা ভবনে রয়েছে তার অংশীদার। কামরুল হাসানসহ চার জন অংশীদার মিলে এ ভবন নির্মাণ করেন। যার মূল্য পাঁচ কোটি দুই লাখ ৬২ হাজার ২২৯ টাকা। খুলশী থানাধীন খুলশী মৌজায় চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড লে-আউট প্ল্যানের প্লট নং-১/সি-তে নির্মিত ‘ফয়জুন ভিস্তা’ নামক অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ০.৭৪ শতক ভিটি এবং উক্ত অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ৮ম (সি-৭) তলার পশ্চিমাংশে সি-টাইপ অ্যাপার্টমেন্টের পরিমাণ ২৫৭০ বর্গফুট এবং নিচতলায় আছে ১৩৬ বর্গফুট স্পেসের গাড়ি পার্কিং। যার মূল্য ধরা হয়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ মৌজায় ৬ গণ্ডা নাল জমির মূল্য ৪০ লাখ, পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ মৌজায় ১২.৭৫ শতাংশ নাল জমির মূল্য ৪৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ মৌজায় ৬.৫৯ শতাংশ নাল জমির মূল্য ২৮ লাখ ৬০ হাজার, পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ মৌজায় চার তলা ভবনসহ সাত শতক জমির মূল্য এক কোটি ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার, ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন আনন্দপুর মৌজায় রয়েছে ৫.২০ শতাংশ জমির মূল্য ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা ধরা হয়েছে। ঢাকার সাভারে ‘সাভার সিটি টাওয়ার’ নামের ১০তলা ভবনটি করা হয় ২৬ শতক জমির ওপর। কামরুল হাসানসহ মোট তিন জনের মালিকানাধীন এ ভবন। যার মূল্য ৬৯ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪০ টাকা। চান্দগাঁও থানাধীন চান্দগাঁও মৌজায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন অনন্যা আবাসিক এলাকায় ৩৫৯৮.৫৬ বর্গফুট আয়তনের ‘এ-২৫৯’নং প্লট। যার মূল্য দেখানো হয় ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর হালিশহর মৌজায় ১ কোটি ২৫ হাজার টাকার ৪০ শতক নাম জমি আছে তার স্ত্রীর নামে।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কামরুল হাসানের আছে- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রাম ওয়েজ আনার্স করপোরেট শাখায় তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক ১৫ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঁচ বছর মেয়াদী ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র। সায়মা বেগমসহ তিন জনের বিনিয়োগে আছে পাঁচটি মালবাহী নৌযান/বার্জে। এখানে বিনিয়োগ এক কোটি ৫১ লাখ ৩১ হাজার ৩৮০ টাকা।

দুদক কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেনের আদালতে করা আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত অপরাধলব্ধ সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর/বিক্রি করার চেষ্টা করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ/সম্পত্তি দ্রুত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তা বেহাত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ (সংশোধনী ২০১৯) এর বিধি ১৮ মোতাবেক বর্ণিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক/অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে দুদক কার্যালয়ে দেওয়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ১৯৮৯ সালে এসআই পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন মীরওয়ারিশপুর এলাকার মৃত মোহাম্মদ গোলাম কবিরের ছেলে। থাকেন চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম নাসিরাবাদ এলাকায়।

অনুসন্ধান কালে দুদক কর্মকর্তা কামরুল হাসানের নামে ১২ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৫ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং এক কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ৯১১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার ১৫২ টাকা। তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস ৯ কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ টাকা কম পাওয়া যায়।

একইভাবে তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে এক কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং এক কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ২৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট দুই কোটি ৫৩ লাখ ২৪০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬২১ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪০ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকা কম পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের বেশ কিছু কর্মকর্তা ও কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসায় এই নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা চলছে। এসব ঘটনার মধ্যে এই অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের সম্পত্তি ক্রোক করা হলো।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা