নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদদের মূর্খ ও স্বার্থপর ভাবা ঠিক হবে না। এত ঘৃণা করা সঠিক না। আমাদের তো অবদান আছে। আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) জ্ঞানগরিমা আছে, লিখেন-পড়েন। কিন্তু বাস্তবায়নটা রাজনীতিবিদ, শ্রমিকেরা করেন। বাস্তবায়ন ও ভাবনা এক জিনিস না।’
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয়তাবাদী প্রচার দল কর্মসূচির আয়োজন করে।
বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘ভাবনায় স্বর্গরাজ্য তৈরি করতে পারেন, বাস্তবায়ন করতে গেলে দেখবেন-কত পদে পদে হোঁচট খান। আপনারা ব্যর্থ হলে জাতি ব্যর্থ হবে। আপনারা ব্যর্থ হলে আমাদের ১৬ বছরের আন্দোলনের ফসল ব্যর্থ হবে। আমরা চাই আপনারা সফল হোন। সেই জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছি।’
ছাত্র ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিভাজন সৃষ্টি না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধীর আড়ালে আরেকটি বৈষম্য সৃষ্টি হলে তার মাশুল কে, কীভাবে দেবে, তা আগাম বলা যাচ্ছে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার করা দরকার, তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে করবেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংসদের মাধ্যমে সংস্কার করবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের কাছে স্পষ্ট করেন-আপনারা নির্বাচন কত দিনে করবেন। কতটুকু সময় লাগবে বলেন না কেন? সেনাবাহিনী (প্রধান) বলেছেন ১৮ মাস। তিনি তাঁর কথা বলেছেন। পরের দিন কেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় এটা সরকারের কথা না। সরকারের কথা কোনটা ৩৬ মাস, না ২০ মাস? একটা বলেন তো! আপনারতো সময় ঠিক করতে হবে।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখনো আপনারা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেননি। জনগণ কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে কবরে পাঠিয়ে দিতে পারত, তারা ধৈর্যশীল। সেখানে মানুষ কীভাবে বিশ্বাস করবে, আপনারা নির্বাচন করবেন। সেখানে আবার আপনাদের কমিশন গঠন করতে হয়। এখানে কমিশনের পরে কমিশন, আরেকটা কমিশন গঠন করতে হয়, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য। এটা সময়ক্ষেপণ ছাড়া অন্য কিছু নয়।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার নামে মামলার বিষয়ে জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমাদের এখনো প্রতিদিন কোট-কাচারিতে যেতে হয়। এটা কেন বিবেচনায় আসে না। আপনাদের মিথ্যা মামলার জন্য আমরা যদি সমব্যথিত হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি। আপনারা দায়িত্ব গ্রহণের পরে আমাদের মামলাগুলো আগের মতই আছে।’
দায়িত্ব নেওয়ার পরে কর্মকাণ্ডের অগ্রাধিকার বর্তমান সরকারের মধ্যে নেই বলে দাবি করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, ‘তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) সবাই এনজিও পরিচালনা করেছেন, কেউ শিক্ষকতা করেছেন। কারও দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা এখন সবচেয়ে বেশি আছে বিএনপির। তাই বিএনপির কাছে পরামর্শ নেওয়ার উচিত ছিল তাদের। তাহলে ফেনী, সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের বন্যার বিষয়ে আগাম পদক্ষেপ নিতে পারতাম।’
বন্যায় সরকারের তৎপরতা চোখে পড়েনি দাবি করে আলাল বলেন, ‘সেনাবাহিনী ও বিজিবির তৎপরতা ছিল কিছু জায়গায়। কিন্তু এই সরকারের উপদেষ্টারা, যারা হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে একদিন দেখলেন যে, সরকারের অংশ হয়ে গেছি। তারা কিন্তু সেই ধরনের তৎপরতা দেখাননি।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশ ভালো থাকলে গ্রামের চৌকিদার-দফাদারদেরও সম্মান থাকবে রাষ্ট্রপতির মতো। কিন্তু দেশ যদি খারাপ থাকে তাহলে, রাষ্ট্রপতির সম্মান হবে ঝাড়ুদারের চেয়েও কম। কথাটা মনে রেখে যাদের দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞতা আছে, নিয়মিত তাদের পরামর্শ নেন। সেটা জাতির জন্য ভালো হবে, আপনাদের জন্যও ভালো হবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন—বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু প্রমুখ।