June 26, 2025, 2:03 pm
সর্বশেষ:
তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিকের সাথে দুর্ব্যবহার প্রকল্প কর্মকর্তার! রাজনীতিতে অতি উৎসাহী কর্মীদের কবলে অপার সম্ভাবনার নেতৃত্ব: একটি গভীর বিশ্লেষণ ডেমরায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির নেপথ্যে রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও গ্যাং সংস্কৃতি মেঘনার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে সামাজিক বিপর্যয় ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি মেঘনায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে অনিয়ম রোধে প্রশাসনের ভূমিকা জোরালো করতে হবে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি মেঘনা উপজেলায় মাদকের আগ্রাসন: ধ্বংসের পথে যুবসমাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা এনবিআর-বিডা কার্যালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ মেঘনায় আওয়ামী লীগ নেতা হলেন বিএনপির সভাপতি

ডেমরায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির নেপথ্যে রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও গ্যাং সংস্কৃতি

 

বিশেষ প্রতিনিধি :

রাজধানীর পূর্বাংশে অবস্থিত ডেমরা থানা এলাকাটি এক সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য পরিচিত ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ এলাকায় যে হারে অপরাধ বাড়ছে, তা শুধু সাধারণ অপরাধ নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে সুসংগঠিত গ্যাং কালচার, রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা।

কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডেমরার কাজলা, কোনাপাড়া,ডগাইর, পশ্চিম সানার পাড়, বাইতুল মেরাজ জামে মসজিদ এলাকা,মহাকাশ রোড, মাতুয়াইল ও আমুলিয়া এলাকায় অন্তত ৮টি সক্রিয় কিশোর গ্যাং রয়েছে। এরা নিজেদের “গ্রুপ” হিসেবে পরিচয় দেয়, যেমন: “ডেমরা ব্রাদার্স”, “কিংস অব কোনাপাড়া”, ইত্যাদি নামে তারা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে। এসব গ্যাংয়ের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে:

দলবদ্ধ হামলা,ছিনতাই,টিকটক ভিডিও বানানোর নামে হিংসাত্মক আচরণ,এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেদের ভয় দেখিয়ে দলে টানা
গোপন সূত্রে জানা যায়, অনেক সময় রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী এসব কিশোর গ্যাংকে “শোডাউন” ও মিছিল-মিটিংয়ে ব্যবহার করেন।

মাদক ব্যবসায় রাজনৈতিক যোগসাজশ?

ডেমরার মাদকের চিত্র আরও ভয়াবহ। এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও আইসের সহজলভ্যতা বেড়েছে। মাদক বিক্রেতাদের একটি বড় অংশকেই এলাকায় সক্রিয় দেখা যায়, অথচ তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ীরা মাসিক চাঁদা দিয়ে নির্দিষ্ট মহলের আশ্রয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী বলেন, “পুলিশ মাঝে মাঝে ধরেও, আবার ছেড়ে দেয়। কারণ সবাই জানে কারা কার পেছনে আছেন।”

পুলিশি টহল কম, প্রতিকার নেই

অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, রাতে ডেমরার অধিকাংশ গলিতে পুলিশি টহল থাকে না। বিশেষ করে স্টাফ কোয়ার্টার ও মাতুয়াইলের কিছু অংশে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনার পরেও পুলিশি উপস্থিতি বাড়েনি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন , জনবল কম, তাই পুরো এলাকাকে কভার করা সম্ভব হয় না।

সচেতন মহলের উদ্বেগ

স্থানীয় সাংবাদিক, শিক্ষক ও সমাজকর্মীরা বলছেন, “ডেমরার সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে গেছে। অভিভাবকরা ভয় পাচ্ছেন, সন্তান কখন কোন গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ে।”

তারা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে পুরো এলাকার যুব সমাজ একটি ‘নষ্ট প্রজন্মে’ পরিণত হবে।

সমাধান কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে,কিশোর গ্যাং নির্মূলে সামাজিক সচেতনতা ও স্কুলভিত্তিক মনিটরিং মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন, পুলিশ ও প্রশাসনের যৌথ অভিযান এবং দুর্নীতিমুক্ত তদন্ত,রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

এই চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে।সূত্র জানায় ডেমরার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেবল একটি এলাকার সমস্যা নয়, এটি একটি বৃহত্তর নগর ব্যবস্থাপনার সংকেত। দ্রুত এবং নিরপেক্ষ হস্তক্ষেপ না হলে পুরো সমাজকাঠামো হুমকির মুখে পড়বে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা