বিপ্লব সিকদার :
জাতীয় সনদ প্রণয়ন—এক সময় যা ছিল কেবল কল্পনার মতো, এখন তা দৃশ্যমান বাস্তবতায় পরিণত হতে যাচ্ছে। অন্তত এমনটাই মনে করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যে নতুন করে আলোচনার খোরাক তৈরি হয়েছে—“সব দলের সহযোগিতা থাকলে চলতি জুলাই মাসেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব।”
ঐক্যের সম্ভাবনায় এগোচ্ছে আলোচনা
রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফার সংলাপ চলছে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। এতে অংশ নিচ্ছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সংলাপের মূল লক্ষ্য—সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার এবং গণতন্ত্রের শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন।
কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, অধিকাংশ দল দ্বিকক্ষীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ গঠনে অনুপাতিক ভোট পদ্ধতির পক্ষে একমত হয়েছে। যদিও কিছু মতভেদ রয়ে গেছে, তবে আলোচনার ধারা যেভাবে এগোচ্ছে, তা ইতিবাচক বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
রাজনৈতিক অবস্থান বনাম জাতীয় স্বার্থ
ড. আলী রীয়াজের বক্তব্যে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
“আমরা কি শুধু নিজের ও দলের স্বার্থ চাইব, নাকি দেশের স্বার্থও দেখব?”
এই প্রশ্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় গভীর তাৎপর্য বহন করে। অতীতে আমরা বহুবার দেখেছি—দেশের স্বার্থকে ছাপিয়ে রাজনৈতিক হিসাব নিকাশই বড় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এবার যদি রাজনৈতিক দলগুলো সত্যিই দেশের বৃহত্তর কল্যাণকে গুরুত্ব দেয়, তবে এটি হতে পারে গণতান্ত্রিক সংস্কারের ঐতিহাসিক সূচনা।
প্রতিটি ছোট অগ্রগতি, একটি বড় আশা
ড. রীয়াজ বাস্তবতাকে অস্বীকার করেননি। তিনি স্পষ্ট বলেছেন—
“প্রতিদিন হয়তো অর্জন হচ্ছে না। কিন্তু আমরা এক জায়গায় পৌঁছাতে চাই।”
এখানেই লুকিয়ে আছে আলোচনার গভীরতা। দীর্ঘদিনের অনাস্থা, বিভাজন ও প্রতিহিংসার রাজনীতিতে এ ধরনের ধীর কিন্তু ধারাবাহিক আলোচনা আশাব্যঞ্জক।
জাতীয় সনদের সম্ভাব্য রূপরেখা
যদি এই সনদ বাস্তবায়িত হয়, তবে এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে—
দ্বিকক্ষীয় সংসদ গঠন
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিতকরণ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপ
নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা
সংবিধান সংস্কারে রাজনৈতিক ঐক্যমত
এই রূপরেখা অনুসরণ করলে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।
আশাবাদের দিকে এক ধাপ
এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে একটি স্পষ্ট দ্বিধাবিভাজিকা—তারা হয় নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে অতীতের পথে হাঁটবে, নয়তো ত্যাগ ও সংলাপের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের পথ দেখাবে।
জাতীয় সনদ একটি দলিল নয়, এটি হতে পারে একটি ঐতিহাসিক মোড় পরিবর্তনের ঘোষণা।
তাই শুধু সময় নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মানসিকতা।
লেখক, সাংবাদিক