September 8, 2025, 3:48 am

বুদ্ধিবৃত্তিক ও সংস্কৃতির আন্দোলন ছাড়া সমাজের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়

বিপ্লব সিকদার :

সমাজ কোনো যান্ত্রিক কাঠামো নয়; এটি মানুষের চিন্তা, চেতনা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের উপর নির্ভরশীল। সমাজের প্রতিটি স্তরের স্থিতি ও বিকাশের পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি এবং গভীর সাংস্কৃতিক শিকড়। কিন্তু যখন এই ভিত্তিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, সহিংসতা, কুসংস্কার, মৌলবাদ ও বিভক্তির বিস্তার ঘটে।

আজকের বাস্তবতায় আমরা দেখছি—শিক্ষিত জনশক্তি বৃদ্ধি পেলেও চিন্তার গভীরতা কমছে, তথ্যের প্রাচুর্য থাকলেও বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব দেখা দিচ্ছে। এর ফলে মানুষ সহজেই গুজব, উস্কানি ও বিভ্রান্তিতে প্রবণ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি যেখানে ছিল মানবিকতা, সহানুভূতি ও সহনশীলতার উৎস, সেখানে এখন স্থান নিয়েছে ভোগবাদ, হিংসা ও আত্মকেন্দ্রিকতা।

এই অবক্ষয় থেকে মুক্তির উপায় কী?

উপায় একটাই—একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে মানুষ আবার চিন্তা করতে শিখবে, প্রশ্ন করতে শিখবে, যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। পাশাপাশি প্রয়োজন সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ, যাতে মানুষ নিজেদের শিকড়, ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্যের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন এবং সচেতন নাগরিকদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে যুক্তিবাদ, মানবিকতা ও বৈচিত্র্যকে সম্মান করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
শুধু আইন, অর্থনীতি বা প্রযুক্তি দিয়ে সমাজের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়, যদি না মানুষের মনন ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করা যায়। বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই একটি মানবিক, সহনশীল ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন সম্ভব। আমাদের সময় এসেছে—চেতনার এই বিপ্লবে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসার।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা